মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) নগদে পরিচালনায় দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত আমরা নগদে পরিচালনায় দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছি। এর মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি হয়েছে।
রবিবার রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম: ব্রিজিং দ্য গ্যাপস’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুইটি উপস্থাপনা দেন এমসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন করীম ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার। এতে তারা দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন এবং এই খাতের বিভিন্ন সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
আলোচনার প্রসঙ্গক্রমের বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, ‘নগদে কিছু ব্যত্যয় পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নগদকে মেরে ফেলা হচ্ছে না; বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সেটাকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে, যাতে বিকাশের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।’
আহসান এইচ মনসুর আরো বলেন, ‘নগদে অনিয়ম খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান চলছে। আমরা সেখানে গুড গভর্নেন্স নিশ্চিত করতে চাই। পরবর্তী সময়ে সেখানে নতুন বিনিয়োগ আহ্বান করা হবে। আমরা ভবিষ্যতে নগদকে সবার ওপরে নিয়ে যেতে চাই।’
টেলিকম সেক্টরে ট্যাক্স বাড়ানো নিয়ে আরও ভাবা উচিত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের টেলিকম সেক্টরের ট্যাক্স রেট ওয়ার্ল্ডের হাইয়েস্ট। এটিকে আরও বাড়ানো প্রয়োজন কি না, আমাদের ভাবা উচিত। কারণ, এটি টেলিকম সেক্টরের এফডিআই কমিয়ে দিতে পারে বা অপারেটদের সার্ভিস আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এমসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করীম ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সিমিন রহমান এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার।
দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসের গেটওয়েতে নানা সমস্যা থাকলেও গত এক দশকে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে মন্তব্য করে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর বলেন, ডিজিটাল সেবা যথাযথভাবে দেওয়া গেলে বিদ্যমান অবকাঠামোতে অনেক কিছু করা যায়; ঠিক যেভাবে ইউএসএসডি সেবার মাধ্যমে এমএফএস বা মোবাইলে আর্থিক সেবাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিকাশ গ্রাহকদের যে ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছে, তা অনেকটাই সফল হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ লাখ মানুষকে তা দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, বড় বড় ঋণগ্রহীতার তুলনায় এসব ঋণগ্রহীতার মধ্যে খেলাপি হওয়ার প্রবণতা খুবই কম।
এর আগে শনিবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকার একটি হোটেলে “ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ” শীর্ষক অনুষ্ঠানে রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের ৮০% ফেরত আনা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর। তখন তিনি বলেছিলেন, সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি হওয়া অর্থের ৮০ শতাংশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং বাকিটা আদায়ে মামলা চলছে। মামলায় জিতে বাকি অর্থও ফেরানো সম্ভব।