বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সবার ঢাকা অ্যাপে হিটওয়েভ সতর্কতা পোর্টালের লিংক সংযুক্ত করা হয়েছে। হিটওয়েভ পোর্টালের মাধ্যমে এখন থেকে সরাসরি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সবার ঢাকা অ্যাপে পূর্বাভাস চলে যাবে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা যেকোনো মুহূর্তে চাইলেই তার এলাকার পূর্বাভাস দেখতে পারবেন।
এছাড়াও এই অ্যাপের মাধ্যমেই যার যার এলাকায় পূর্বাভাসের সাথে অনুভূত তাপমাত্রার পার্থক্য এবং সেই সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে পারবেন। এই হিটওয়েভ পোর্টালের পূর্বাভাস পেতে চাইলেই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পেতে পারবেন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সবার ঢাকা অ্যাপ ব্যবহারকারীরা সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাভাস পাবেন।
সেভ দ্য চিলড্রেনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, Regional Integrated Multi hazard Early Warning System (RIMES) এই হিটওয়েভ সতর্কতা পোর্টাল ব্যবস্থাপনা করছে।
অ্যাপটির মাধ্যমে নাগরিক সেবা আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে সোমবার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে হিটওয়েভ সতর্কতা পোর্টালের উদ্বোধনী কর্মশালা। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সদস্যরা উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করেন এবং পোর্টালের সাথে জড়িত সংস্থাসমূহের কার্যক্রমের বিস্তর আলোচনা ও মতামত প্রদান করেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ সকল কার্যক্রমের মান আরো বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানিয়ে অ্যাপটিতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সতর্কীকরণ বার্তাসমূহ আরো সূক্ষ্ম, স্থান ভিত্তিক ও বেশি লিড টাইম বা আগাম সময় ভিত্তিক করার পরামর্শ ওঠে আসে কর্মশালায়।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র মোঃআতিকুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ‘এই পোর্টালের মাধামে একদিকে যেমন ব্যবহারকারীকে সহজে পরিকল্পপিত পদক্ষেপ ও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে, তেমনি অন্যদিকে নির্দিষ্ট খাত যেমন কৃষি, প্রাণিসম্পদ, নগর পরিকল্পনা এবং প্রাসঙ্গিক খাতের ব্যবহারকারীদের চাহিদা সম্পর্কে অবগত করবে। বিশেষ করে নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য আগাম পদক্ষেপ নিতে খুবই সাহায্য করবে।’
পাশাপাশি তিনি হিটওয়েভ কে জাতীয় দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করা এবং দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশে তাপপ্রবাহ কে সংযুক্ত করার জোরদার আহবান জানান। এছাড়া প্রত্যেকটা দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যক্তি পর্যায়ে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানান।
ডিএনসিসি মেয়র আরো বলেন ‘হিটওয়েভের সচেতনতা এবং প্রচারণা অংশ হিসাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একটি বিশেষ ছাতা তৈরি করা হয়েছে রিকশাচালকদের জন্যে যা তারা চাইলেই রিকশার স্ট্যান্ডের সাথে এডজাস্ট করে ব্যবহার করেত পারবে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ৩৫ হাজার রিকশা ও ভ্যানচালকদের মাঝে বিনামূল্যে ছাতা বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও হাফ লিটার পানির বোতল বিতরণ করা হয়েছে যাতে করে তারা চাইলেই সহজে সাথে বহন করতে পারে।’
আর্শট রক ফেলার ফাউন্ডেশনের নিয়োগকৃত চিফ হিট অফিসার বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ‘এই কালার কোডেড হিটওয়েভ অ্যালারট সিস্টেমের মাধ্যমে নগরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে ও সেই সব জনগোষ্ঠীর জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে পরবর্তীতে সবার ঢাকা অ্যাপে এই হিটওয়েভ অ্যালারট সিস্টেমের সংজোজন খুব যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।’
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, এই পোর্টালের বিশেষ সুবিধা যেটা তা হলো, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের কাছে সরাসরি সবার ঢাকা অ্যাপের মাধ্যমে এলার্ট চলে যাবে এবং করণীয় সম্পর্কে জানানো হবে। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায়, সিটি কর্পোরেশনের চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বেশ কয়েকটি হিটওয়েভ প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ সকল কার্যক্রম এর প্রেক্ষিতে এবং হিটওয়েভ জনিত ক্ষতি প্রতিরোধ করতে এই পূর্বাভাস পোর্টালের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
কর্মশালায় অংশ নেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে পরিচালক আজিজুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তররের পরিচালক নেতাই চন্দ্র দে সরকার, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ। রাইমসের কান্ট্রি প্রোগ্রাম লীড, রায়হানুল হক খান সহ বিভিন্ন এনজিও ও আইএনজিও থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান স্বাগত বক্তব্যে বর্তমান সময়ে চলমান হিটওয়েভের বৈরী প্রভাব ও সেক্ষেত্রে এই নতুন পোর্টালের প্রযুক্তিগত উপযোগিতা, উন্নতি এবং নির্ভরযোগ্যতার বিষয় তুলে ধরেন। তিনি সকল অংশগ্রহনকারীকে সঠিক পূর্বাভাস গ্রহনের আহ্বান জানান এবং হিটওয়েভের ঝুঁকি মোকাবেলায় এই পোর্টালের তাৎপর্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মীর খায়রুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনারেল মো মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. ইমরুল কায়েস চৌধুরী।