প্রকাশকদের শুধু কাগজের নয়, ডিজিটাল প্রকাশক হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ডিজিটাল প্রকাশনার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধনের আগে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এরপর তিনি বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বক্তেব্যে তিনি বলেন, পড়ার অভ্যাস সবার থাকা উচিত। ছোটবেলা থেকে বাবা-মা যদি শিখায় সেটি ভালো হয়। অনেকে ঘুমের জন্য ওষুধ খায়, প্রয়োজন নেই। বই পড়লেই ঘুম চলে আসে। বেশি মজাদার বই পড়লে আবার ঘুম আসবে না। এ জন্য আবার বই বাছাই করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’। কী মধুর আমাদের ভাষা। আমি একটা কথা বলব যে, এখন আমাদের যুগটা হয়ে গেছে বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগ। বই প্রকাশ এটা অবশ্যই থাকবে, এটা যাবে না। কারণ, একটা বই হাতে নিয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে আলাদা একটা আনন্দ আছে। আজকালকার ছেলের মেয়েরা আবার ট্যাবে করে বই পড়ে অথবা ল্যাপটপে পড়ে। যদিও আমরা ওইভাবে খুব একটা আনন্দ পাই না। কিন্তু তারপরও আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সবকিছু নিয়ে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। আমি আমাদের প্রকাশকদের অনুরোধ করব, প্রকাশকরা শুধুমাত্র কাগজের প্রকাশক হলে হবে না, ডিজিটাল প্রকাশক হতে হবে। ডিজিটাল হলে শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশেও সকলের কাছে এটা পৌঁছাতে পারব। অন্যান্য ভাষাভাষী লোকেরাও পড়বে। কাজেই সেদিকেও একটু নজর দিলে মানসিকতার পরিবর্তন হয়ে আধুনিক প্রযুক্তিটাও নিজেরা রপ্ত করতে পারব। ’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, লাইব্রেগুলিতেও সাথে সাথে অডিও ভার্সন থাকবে, অডিও ভার্সনের কিন্তু প্রয়োজন আছে। সেটাও থাকলে অনেকের সুবিধা, শুনবে জানতে পারবে, সে ব্যবস্থাটাও আমাদের নেওয়া উচিত। এটাই সব থেকে দরকার, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমরা এগিয়ে যাব।
এ বছর ১১টি বিভাগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ দেওয়া হয়েছে।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোক কাহিনী)।
বক্তব্যের আগেই প্রধানমন্ত্রী তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। বক্তব্যের পর মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। বরাবরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকছে মেলার আয়োজন।
মেলায় ৬৩৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছে ৯৩৭টি ইউনিট। এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০ প্রতিষ্ঠান ১৭৩টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭৬৪ ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে ৫১৫ প্রতিষ্ঠান।
এবারের বইমেলা অধিবর্ষের বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে রাত ৮টা ৩০ মিনিটের পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র-শনিবার বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে।