আদালতে বাংলা রায় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার সফটওয়্যারসহ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান-কে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, ঢাকা আয়োজিত প্রধান বিচারপতিকে দেয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সভাপতি সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দেশে মামলার জট হওয়ার কারণ এবং সেখান থেকে জট দূর করা এবং আদালতের সর্বত্র বাংলাভাষার জন্য যা যা করণীয় সেটা নিয়ে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল স্তম্ভ ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সমতার বাংলাদেশ। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ থেকে শুরু করে পরবর্তী সব ধাপ এবং সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে সেই চেতনা রক্ষার প্রতিজ্ঞা করেছি। অতীতে নানা দায়িত্ব পালনকালে ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় এবং সংবিধান সমুন্নত রাখায় কাজ করেছি। প্রধান বিচারপতি হিসেবেও নিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্ পালন করে যাব। তিনি বলেন, আইনের বই বাংলায় করার কথা, বাংলায় রায় দেওয়ার কথা, মামলার জট কমানোর কথা অনুষ্ঠানে বক্তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে তিনি তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এর আগে উচ্চ আদালতের সর্বত্র বাংলাভাষায় কার্যক্রম চালু করতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এর ভূমিকা প্রত্যাশা করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, বাংলা পৃথিবীর প্রতিটি ডিজিটাল যন্ত্রে এখন লেখা যায়। পশ্চিম বঙ্গের সাহিত্যিকরাও বলছেন বাংলাভাষা বাংলাদেশেই টিকে থাকবে এবং ঢাকা হবে বাংলা ভাষার রাজধানী। সতের কোটি মানুষের প্রাণের দাবি সর্বত্র বাংলাভাষার প্রবর্তন।
মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভার্চু্য়্যাল আদালত পরিচালনার চমৎকার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য মামলার বাদী বিবাদীসহ আইনাঙ্গন সংশ্লিষ্টদের সামান্য জিজিটাল দক্ষতাই ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থার জন্য যথেষ্ট। করোনাকালে জীবনধারা সচল রাখার পাশাপাশি ভার্চুয়্যাল আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বিচারালয় সচল রাখা হয়।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে যেন ময়মনসিংহ অঞ্চলের উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে পারি সেই লক্ষ্য রাখতে হবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষ গুণীজনকে সম্মানিত করে৷ আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আরও কীর্তিমান মানুষ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে দেশের সেবায় এগিয়ে আসবেন।
সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফুল হাসান খসরু বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যখন আসে তখন ওবায়দুল হাসান হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। সেই সরকারের নির্যাতন ও মামলার খড়গে যখন আমরা নিষ্পেষিত ছিলাম তখন তিনি বিনামূল্যে আওয়ামী লীগের নেতাদের মামলা লড়েছেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি বিচার বিভাগে নতুন যুগের সূচনা করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃতি সন্তান ওবায়দুল হাসানের নিয়োগ পাওয়া আমাদের জন্য গর্বের। তার জীবন অসংখ্য মহান কাজে পরিপূর্ণ। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে একাত্তরের দালালদের বিচারে কাজ করেছেন। তিনি ট্রাইবুনালে মোট ১১টি মামলার রায় দিয়েছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন উর রশীদ তার বক্তব্যে প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানান।
অন্যান্যের মধ্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, এমপি এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, ঢাকার মহাসচিব ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) ডিএমপি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এর আগে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম, ঢাকাস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী কল্যাণ সমিতি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারি সমিতি, যুব সমিতি, ময়মনসিংহ জেলা সমিতি, টাঙ্গাইল জেলা সমিতি, কিশোরগঞ্জ সমিতি, জামালপুর, নেত্রকোণা ও শেরপুর জেলা সমিতি সংবর্ধিত অতিথি প্রধান বিচারপতি।