বই নকল করে পিডিএফ বানিয়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ইন্টারনেট থেকে এই বই ডাউনলোড করে বিনা পয়সায় নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। বই নকল করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার (আগস্ট) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) ৪২তম বার্ষিক সভায় এসব কথা জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
মন্ত্রী বলেছেন, বই নকল করে পিডিএফ বানিয়ে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়া বন্ধ করার ক্ষমতা আমার আছে। আমি প্রকাশকদের অনুরোধ করবো আপনারা যদি এমন লিংক দেখেন, তাহলে আমাকে জানাবেন। এটা বন্ধ করে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। বই নকল করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে এটা তালা মারার ক্ষমতাটাও আমার আছে। তালাটা আমি দিয়ে দেবো, এটা নিশ্চিত থাকেন।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন এর সভাপতিত্বে বার্ষিক সভায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্টা ওসমান গণি, সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, কায়সার-ই-আলম প্রধান, সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন, মির্জা আলী আশরাফ কাশেম ও মাজহারুল ইসলাম।
এসময় ‘বাপুস: স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে দৃঢ়প্রত্যয়ী’ শীর্ষক ছয় দফা দাবি সংবলিত লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল।
অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বারকে বাংলাভাষার প্রকাশনা জগতের জনক আখ্যায়িত করে বলেন, প্রকাশনা শিল্পকে স্মার্ট প্রকাশনা শিল্পে রূপান্তরে তাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তারা এই লক্ষ্যে মন্ত্রীকে সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণের অনুরোধ করেন। দেশের প্রথম ডিজিটাল সংবাদ সংস্থা আবাস সম্পাদক মোস্তাফা জব্বার এ জন্য সংগঠকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পরে মন্ত্রী সংগঠনের স্মার্ট সফটওয়্যার এর উদ্বোধন করেন এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির মুখপত্র ‘ পুস্তক’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন। এর আগে তিনি বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সুখী -সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার চুড়ান্ত পদক্ষেপ উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এসময় তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান সংগ্রাম এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা জন্য সকলকে সম্মিলিত উদ্যোগে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
প্রকাশনা শিল্পের সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কম্পিউটার ছাড়া প্রকাশনা সম্ভব নয়। কম্পিউটারের ওপর ভ্যাট ট্যাক্স থাকার কারণে কম্পিউটার ছিল সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কম্পিউটার সাধারণের নাগালে পৌঁছে দেন। এর ফলে দেশে সূচিত হয় ডিজিটাল বিপ্লবের অভিযাত্রা।
তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তিতে ৩২৪ বছর পিছিয়ে থেকেও পৃথিবীতে বাংলা অক্ষর, বাংলা ভাষা এবং বাংলা প্রকাশনা বাংলাদেশেই টিকে থাকবে। নিজের হাতে ১১০টি বাংলা ফন্ট তৈরি এবং কী বোর্ডের ২৬টি বোতামে যুক্তাক্ষরসহ ৫৪০টি অক্ষর সন্নিবেশ করে বাংলাভাষাকে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে রূপান্তরের কাজটি খুবই দূরূহ হলেও করতে পেরেছি, সেটাই আমার জীবনের বড় সফলতা।
সফলতার এই পথ বেয়ে শীশার অক্ষর বিদায় করে কম্পিউটারে বাংলা পত্রিকা প্রকাশ বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের ঐতিহাসিক অর্জন বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে দেশে সাড়ে সাত লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। ২০২৩ সালে প্রায় তের কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ২০০৬ সালে এক এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউদথের দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা। এক দেশ এক রেটের আওতায় ২০২৩ সালে মাত্র ৬০ টাকায় এক এমবিপিএস ব্যান্ডউদথ আমরা গ্রাহককে সরবরাহ করছি।
তিনি আরো বলেন, ২০০৬ সালে মাত্র সাড়ে সাত জিবিপিএস ব্যান্ডউদথ ব্যবহৃত হতো বর্তমানে তা প্রায় ৫ হাজার জিবিপিএস অতিক্রম করেছে এবং ২০৩০ সালে দেশে ৩০ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউদথের প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের রূপান্তরের ধারাবাহিকতায় পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতিরও পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কাগজের বইয়ের পাশাপাশি এখন ডিজিটাল বই প্রকাশ হচ্ছে এবং অনলাইনে তা বিক্রিও হচ্ছে।
পৃথিবীর পরিবর্তনের সাথে প্রকাশক ও বিক্রেতাদেরও পরিবর্তন হতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিকে নিজের প্রয়োজনে এবং নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে হবে। তিনি পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মন্ত্রী এই ব্যাপারে সম্ভাব্য সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। সাবেক বিসিএস ও বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রকাশনা শিল্পকে কেবল শিল্প হিসেবে নয় শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।