এখন মুঠোফোনেই দেখা যায় ছবি। যখন যেখানে খুশি, সেখানে বসেই। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন নেই তার টেনে অথবা বক্স বসিয়ে টিভি চ্যানেলের সংযোগ নেয়ার। কেবল ইন্টারনেট সংযোগ হলেই সই। এরপর আইপিটিভি’র অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করলে কেল্লা ফতে।
মুঠোফোন ছাড়াও ইচ্ছা হলে বাড়ির স্মার্ট টিভিতেও উপভোগ করা যায়। এর জন্য সরাসরি বা তারের জঞ্জালময় কোনো স্যাটেলাইট সংযোগের দরকার নেই।
আধুনিক বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই টিভির প্রচলন শুরু হয়েছে। যাকে বলা হয় ইন্টারনেট প্রোটোকল টেলিভিশন বা আইপিটিভি। ব্রডব্যান্ড ইন্টানেট সংযোগ ঘুরে ইতিমধ্যেই থানা পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে।
স্যাটেলাইট টিভি মানে এক বিশাল আয়োজন। একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল চালু করতে দরকার হয় কোটি কোটি টাকা আর শত শত লোকবল। আইপিটিভি’ সেবা দিতেও সেই ঝামেলাও কম। তার কেটে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি নেই। সব সেবাই মেলে নিমেষে অনলাইনে।
দুই বছর নিষেধাজ্ঞার পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে স্ট্রিমিং সেবা, আইপি টিভি ও ভিওডি সেবা দেওয়ার পথ উন্মুক্ত করে বিটিআরসি। তবে সবাই এটি পারবেন না। শুধু ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যারা আইএসপি হিসেবে নিবন্ধিত আছে, তারাই এই সম্প্রচারে গেছেন।
বিটিআরসি তাদের নতুন সিদ্ধান্তে জানায়, এ সেবা দেওয়ার জন্য আইএসপিগুলোকে আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হবে না। সে ক্ষেত্রে শুধু অনুমতি নিলেই হবে। তবে বিদেশী অনুষ্ঠান সম্প্রচারে প্রয়োজন হবে তথ্যমন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র। বণিজ্যিক সম্প্রচারে ট্যারিফ অনুমোদন। অবশ্য এর কোনো ঝক্কিই বুঝেবন না গ্রাহকরা।
ইতিমধ্যে দেশের মধ্যে এমন সেবা দিতে শুরু করেছে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। অনেকেই রয়েছে পাইপলাইনে। তবে সবার আগে দেশে আইপিটিভি সেবা চালু করে রেডিয়েন্ট আইপি টিভি। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পকে এক ধাপ এগিয়ে নেয়া এই প্রতিষ্ঠানের অপারেশন ম্যানেজার এবং বাংলাদেশে আইপিটিভি সেবাদাতাতের মধ্যে অগ্রজ আশিকুর রহমান জানিয়েছেন কীভাবে হাতের মুঠোয় টিভি’র সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
যেভাবে কাজ করে আইপিটিভি
প্রচলিত টিভিগুলো স্যাটেলাইট ভাড়া নেয়। তার মাধ্যমে তাদের অনুষ্ঠান বেতার তরঙ্গে পরিণত করে। অ্যানটেনা সেই তরঙ্গকে ধারণ করে এবং তরঙ্গ থেকে ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালে পরিণত করে। আইপিটিভি সেই সিগন্যাল থেকে অডিও এবং ভিডিওকে ডিকোড করে সম্প্রচার করে।
অন্যদিকে ইন্টারনেট টিভিতে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে স্যাটেলাইট ভাড়া নেওয়ার দরকার পড়ে না। আইপি টিভিতে যেটা ঘটে, কনটেন্টগুলো কম্পিউটার থেকে সার্ভারে নেয়া হয়। হতে পারে সেটা গুগলের ডেটা সেন্টার, হতে পারে নিজস্ব ডেটা সেন্টার। এখান থেকে ভিডিওগুলো ইনপুট করা হয়। তারপর এখান থেকে সেগুলো বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠান কখনো লাইভ বা কখনো রেকর্ড করে সার্ভার থেকে ইন্টারনেটে সেন্ড করা হয়। এ ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান দেখতে আলাদা একটি বক্সের প্রয়োজন পড়ে। যাকে বলা হয় অ্যান্ড্রয়েড বক্স বা টপবক্স। আর মোবাইলে দেখার জন্য অ্যাপস ডাউনলোড করতে হয়। বর্তমানে যারা ইন্টারনেট টিভি হিসেবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন, তারা সবাই বিভিন্ন এলাকায় কেবল অপারেটরদের কাছে এই বক্সটি রেখে দেন। সেখানে ইন্টারনেট সংযোগও থাকে। এখন ওই অপারেটরের থেকে যত বাড়িতে ডিশ সংযোগ গেছে, তাদের প্রত্যেকের টিভিতে ইন্টারনেট টিভির অনুষ্ঠান দেখা যাবে।
স্যাটেলাইট ক্যাবলে যেভাবে টিভি দেখা যায় এখানেও বিষয়টি খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। আইপিটিভি অপারেটররা কেবল অপারেটরদের মতোই সংযোগ দেয়। কোনো রকম ঝিরঝিরি ছাড়াই উপভোগ করা যায় সব অনুষ্ঠান।