সাইবার জগতে নেতৃত্ব দিতে ‘সাইবার সেন্টার ফর এক্সিলেন্স’ উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ডিজিটাল সংহতির আরো সুদৃঢ় করলেন বাংলাদেশের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যের নিউপোর্টে সাইবার ওয়েলস চেয়ারম্যান সহ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠকে তার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুনা তাসনিম।
অপরদিকে বিশ্বনন্দিত কমিউনিটি ইন্টারেস্ট কোম্পানি ‘সাইবার ওয়েলস’ চেয়ারম্যান কর্নেল জন ডেভিস এমবিই এবং বোর্ড অব ডিরেক্টর ফাহিম আজহার।
বৈঠকে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সাইবার ওয়েলসের আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার লক্ষ্যে সাইবার ক্লাস্টার, সাইবার স্কিল গ্রোথ ওয়ার্কিং গ্রুপ, সাইবার অ্যাক্সিলারেটর উদ্যোগ এবং সাইবার ইনকিউবেশন সেন্টারের আরও উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করা হয়। আলোচনায় ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ এবং আইন প্রয়োগকারীদের নিয়ে সাবার প্রতিরক্ষার সব ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণের বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এতে ২০২১ সালের শুরুর দিকে (কোভিডকালীন) ‘সাইবার ওয়েলস’ এর সাথে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিজিডি ই-গভ সার্টের মধ্যে সম্পাদিত ভার্চুয়াল চুক্তিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আলোচনায় একটি সুদৃঢ় ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে সাইবার দক্ষতায় বিনিয়োগ এবং সাইবার ওয়েলসের সাথে শক্তিশালী সাইবার বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে আরও নিবিড়ভাবে বাংলাদেশ ও সাইবার ওয়েলস সরকার একসাথে কাজ কবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, সাইবার সুরক্ষায় বিশ্বে নেতৃত্বে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এজন্য আমরা সাইবার ওয়েলসের মতো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে নিয়ে সাইবার সেন্টার ফর এক্সিলেন্স গড়ে তুলবো। এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি অনলাইনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।
কোনো দেশের একার পক্ষে সাইবার নিরাপত্তা মোকাবিলা করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন,সাইবার সুরক্ষা অটুট রাখতে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সে লক্ষ্যেই আইসিটি বিভাগের বিজিডি ই-গভ সার্ট বাংলাদেশে সাইবার সেরা অনুশীলন নিশ্চিত ও বাস্তবায়নের জন্য সাইবার ওয়েলসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে আরো জোরালো করে রাষ্ট্রদূত সৈয়দা মুনা তাসনিম বলেন, “আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশ ই-গভ কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের (বিজিডি ই-গভ সার্ট) মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বন্ধুত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশের সার্ট এবং সাইবার ওয়েলস যৌথভাবে সাইবার ট্রেড এবং বিনিয়োগ আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে।”
‘ডিজিটালভাবে সংযুক্ত বিশ্বে ক্রমবর্ধমান সাইবার হুমকি মোকাবেলা করা একা কোনো একক দেশের পক্ষে অসম্ভব। এই বিষয়ে, আমরা যুক্তরাজ্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার সাইবার ওয়েলস। যুক্তরাজ্যের অন্যান্য ডিজিটাল ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ সাইবার নিরাপত্তা ইকোসিস্টেম তৈরি করতে আমরা উভয়েই একসঙ্গে কাজ করবো’-যোগ করেন তিনি।
অপরদিকে সাইবার সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সাইবার ওয়েলসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান জন ডেভিস এমবিই বলেন, “ইতোমধ্যেই আমরা বাংলাদেশের আইসিটি এবং টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে ঈর্ষণীয় প্রতিভার স্বাক্ষর পেয়েছি। সাইবার ওয়েলস এমন একটি দেশে সাইবার সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য একটি ন্যূনতম ভূমিকা পালন করতে পেরে গর্বিত। এর মাধ্যমে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো দীর্ঘস্থায়ী এবং গভীর হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছে ওয়েলসে সাইবার কোম্পানীগুলো। যুক্তরাজ্যের জাতীয় সাইবার প্রোগ্রামের কেন্দ্রে রয়েছি আমরা। ফলে আমরা সাইবার সুরক্ষায় একটি ইকোসিস্টেম হিসাবে সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগ করে নেওয়ার এবং সহযোগিতা করার চেষ্টা করি৷ এক্ষেত্রে আরো বড় পরিসরের বাংলাদেশের প্রকল্পগুলিতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য আমরা খুব উন্মুখ।”
বক্তব্যে বাংলাদেশের জাতীয় সাইবার ড্রিলে বিডিজিডি ই-গভঃ সার্টকে সার্বিক সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন সাইবার ওয়েলন বোর্ড অব ডিরেক্টর, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজার এবং সাইবার ওয়েলসের মধ্যপ্রাচ্য ক্লাস্টার ম্যানেজার ফাহিম আজহার। বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বকে সম্মানের উল্লেখ করে চলতি বছরের শেষের দিকে ঢাকায় সাইবা ওয়েলস শীর্ষ কর্তাদের ঢাকা সফরের পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ করেন তিনি।
বৈঠক শেষে যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার (আইসিসি) ওয়েলসের পরিচালক মিসেস ন্যান্সি মোলেটকে এমন একটি চমৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।