টানা ৫ম বারের মত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার “ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার-২০১8” অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের আইসিটি সংক্রান্ত বিশেষায়িত সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদর দপ্তর জেনেভায় 20 মার্চ ২০১৮ এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের হাতে ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার-2018 তুলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার। এ সময় এটুআই প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী, পরিবীক্ষণ বিভাগ প্রধান ডঃ রমিজ উদ্দিন, পলিসি স্পেশালিস্ট মোঃ আফজাল হোসেন সারওয়ার, ও খন্দকার শাহ্নূর সাব্বির উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশ থেকে উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ এবং অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ রুহুল আমিন।
এ বছর মোট দু’টি মৌলিক উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য এটুআই ‘ডব্লিউএসআইএস’ সম্মাননা পেয়েছে। এটুআই প্রোগ্রামের “মুক্তপাঠ” উদ্যোগ চূড়ান্তভাবে বিজয়ী এবং বাংলাদেশ পুলিশের সাথে যৌথভাবে তৈরি “পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম” রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ‘মুক্তপাঠ’ (muktopaath.gov.bd/login/auth) বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম,যা ব্যবহার করে যে কোন স্থান হতে যে কোন সময়ে অনলাইনে এবং অফলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা সম্ভব।এই উন্মুক্ত ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম থেকে সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং জীবনমুখী শিক্ষা বিষয়ক কোর্স বিনামূল্যে গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকেএটুআই প্রোগ্রামের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড-এর মাধ্যমে‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (pcc.police.gov.bd/en) চালুর মাধ্যমে দেশের নাগরিকগণ এখন যে কোনো সময় যে কোন স্থান থেকে অনলাইনে এই সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারেন।প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে এই সেবার জন্যে আবেদন করতে পারেন, ই-পেমেন্টের মাধ্যমে এই সেবার ফি পরিশোধ করতে পারেন এবং যে কোন মোবাইল থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারেন। এই সেবা অনলাইনে আসার মাধ্যমে বিদেশে গমনেচ্ছুক নাগরিকেরা একটি স্বচ্ছ, সুলভ, সহজ এবং সময়সাশ্রয়ী প্রক্রিয়ায় তদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ডব্লিউএসআইএস-২০১8 এর সম্মাননা গ্রহণ করার পর এক প্রতিক্রিয়ায় এটুআই প্রোগ্রাম এর প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার জানান, এই অর্জন সমগ্র জাতির। এ প্রসঙ্গে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ এর রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়’কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি আরো বলেন, তাদের অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব রূপ লাভ করেছে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। আইটিইউ আয়োজিত ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার-২০১৮ প্রতিযোগিতায় ১৭৭ টি দেশের মধ্যে পঞ্চমবারের মত বিজয় লাভ করায় তিনি মাঠ প্রশাসনসহ সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, এটুআই প্রোগ্রামের সকল সদস্য ও মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ভুটানের আইসিটি মন্ত্রী, জাতিসংঘের বিশেষায়িত দুটি সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ২২ মার্চ একটি জাতীয় পর্যায়ের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে যার মাধ্যমে বিশ্বের সামনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নিত হবার অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরা হবে।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উদ্যোগ ও বাস্তবায়নের বড় ধরণের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এটুআই প্রোগ্রাম কর্তৃক জনগণের দোরগোড়ায় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাস্তবায়িত অসংখ্য উদ্ভাবনী উদ্যোগের মধ্যে বিগত ৪ বছর যথাক্রমে ২০১৪ সালে ডিজিটাল সেন্টার; ২০১৫ সালে জাতীয় তথ্য বাতায়ন; ২০১৬ সালে সেবা পদ্ধতি সহজিকরণ-এসপিএস, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনলাইন ছাড়পত্র, শিক্ষক বাতায়ন এবং কৃষকের জানালা;এবং2017 সালে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “টেলিমেডিসিন প্রকল্প“, “নাগরিক সেবা উদ্ভাবনে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার“ এবং “ই-নথি”ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডাব্লিউএসআইএস) পুরস্কার অর্জন করেছে।