উৎপাদনের পরিসর বেড়ে বছর ব্যবধানে গেলো ২০২২ সালে বাংলাদেশে স্মার্টফোন আমদানি কমেছে ২৩ শতাংশ। বৈশ্বিক শিল্প বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের সর্বশেষ মার্কেট মনিটর সার্ভিসের গবেষণা অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বৈশ্বিক সরবরাহে ব্যাঘাত, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং নতুন আরোপিত মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) কারণে এমনটি হয়েছে।
তবে সার্বিকভাবে স্মার্টফোন আমদানি কমলেও শাওমি এবং নকিয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এই দুটি ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। স্থানীয়করণে গুরুত্ব দেওয়ায় এবং দাম নির্ধারণে কৌশলী হওয়ায় এদের স্মার্টফোন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে স্মার্টফোন আমদানিতে।
এখন পর্যন্ত ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন আমদানি করেছে শাওমি। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের এক নম্বর স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে প্রায় দ্বিগুণ স্মার্টফোন আমদানি করেছে তারা। ২০২১ সালে শাওমির অবস্থান ছিল ৬ নম্বরে। অন্যদিকে ২০২২ সালে ১৩ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে স্যামসাং। আর ১১ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে তিন নম্বরে নেমে গেছে রিয়েলমি। ভিভো এবং অপো তাদের মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে তাদের আমদানি কমেছে যথাক্রমে ১৭ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ।
বাংলাদেশে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সব ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেটের (স্মার্টফোন এবং ফিচার ফোনের সমন্বিত বাজার) বাজার কমেছে ৮ শতাংশ। সমন্বিত এই বাজারের শীর্ষে রয়েছে দেশের স্থানীয় ব্র্যান্ড সিম্ফনি। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে আছে ২৬ শতাংশ মার্কেট শেয়ার। ফিচার ফোন মার্কেটেও শীর্ষে রয়েছে সিম্ফনি৷ এক্ষেত্রে তাদের মার্কেট শেয়ারের পরিমাণ ৩৭ শতাংশ।
সার্বিকভাবে স্মার্টফোন আমদানি কমে যাওয়া সম্পর্কে গবেষক অক্ষয় আরএস বলেন, ‘ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতাদের চাহিদা কম নিয়েই বছর শুরু হয়। এরপর সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে আমদানি শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় এবং ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিক মূল্য সংযোজন কর আরোপ হওয়ায় ৭ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের স্মার্টফোন আমদানি হ্রাসের হার দুই অংকের ঘরে পৌঁছেছে। পাশাপাশি রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে। এতে স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারীদের উৎপাদনও কমে যায়।
অবশ্য ২০২২ সালে স্মার্টফোন মার্কেটে একটি মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দেশে ফাইভজি স্মার্টফোন আমদানি ১০ লাখের ঘরে পা রাখলো। ২০২১ সালের চেয়ে এই পরিমাণ ১৫১ শতাংশ বেশি। এতে বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে ফাইভজি স্মার্টফোনের শেয়ার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২১ সালে এই শেয়ারের পরিমাণ ৯ শতাংশ থাকলেও ২০২২ সালে তা ১৭ শতাংশে পৌঁছায়।
আগামীর অবস্থা সম্পর্কে ২০২৩ সালের আউটলুকে সিনিয়র অ্যানালিস্ট করণ চৌহান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্মার্টফোন মার্কেট একটি চ্যালেঞ্জিং বছর পেরিয়ে ২০২৩ সালে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ফিচারফোন থেকে স্মার্টফোনের ব্যবহার আবারও শুরু হলে এবং ফাইভজি স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে বাজার সম্প্রসারিত হবে। তবে মূল্যস্ফীতিজনিত ঝুঁকি এবং মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সম্পর্কিত সংকট মোকাবিলায় দেশটি কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার ওপরই নির্ভর করবে বাজার সম্প্রসারণের মাত্রা।’
এদিকে গ্রাহক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে গ্লোবাল রাইজিং স্টারস তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে গ্রামীণফোন। বৈশ্বিকভাবে মোবাইল নেটওয়ার্কের মান নিয়ে কাজ করা ওপেনসিগন্যাল এর ‘গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স রিপোর্ট’ অনুযায়ী, গ্রাহকদের ভয়েস অভিজ্ঞতার মানোন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি বছরপ্রতি উন্নতি করেছে –সর্বোচ্চ ১২.৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ডাউনলোড গতিতে এগিয়ে রয়েছে বাংলালিংক। ৭৮.৫ শতাংশ স্কোর নিয়ে ডাউনলোড স্পিড এক্সপেরিয়েন্স শ্রেণিতে বাংলাদেশ থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলালিংক। এক্ষেত্রে, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন। অপরদিকে ফোরজি/ফাইভজি শ্রেণিতে মোস্ট পারসেন্টেজ ইমপ্রুভমেন্ট টাইমে বাংলালিংক এগিয়ে রয়েছে ৭.৫ শতাংশ। আপলোড স্পিড এক্সপেরিয়েন্স শ্রেণিতে গ্রামীণফোন ৭২.৩ শতাংশ, রবি ৬০.৩ শতাংশ এবং বাংলালিংক ৫৯.৫ শতাংশ উন্নতি করেছে।