২০২২ সাল শুরুর পর থেকে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু অক্টোবর মাসেই এক মাসের ব্যবধানে কার্ডে লেনদেন বেড়েছে ৩.২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুধু অক্টোবরেই কার্ডের মাধ্যমে ৬০৫ কোটি টাকার নজিরবিহীন লেনদেন হয়েছে। এর এক মাস আগে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিলো ৫৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসেই লেনদেন বেড়েছে ১৯ কোটি টাকা।
তবে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বাড়লেও আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে কার্ডের সংখ্যা কমে গেছে। এই বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩৩.৩ মিলিয়ন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ছিল। এর মধ্যে প্রায় ২৮.৩ মিলিয়ন ডেবিট কার্ড ও বাকিগুলো ক্রেডিট কার্ড। এছাড়া অক্টোবরে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩২ মিলিয়নে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কার্ডের মাধ্যমে স্থানীয় লেনদেনও একই সময়ে গত বছরের তুলনায় ৪৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরের প্রথম দশ (জানুয়ারি-অক্টোবর) মাসে দেশে কার্ড ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ১৭২% বেড়েছে। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ৩,৯০৮ কোটি টাকা বেড়েছে।
এর বিপরীতে গত বছরের প্রথম দশ মাসে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন হয়েছে ১,৪৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ নগদ ডলার সংকটের কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি-অক্টোবরে এ ধরনের লেনদেন বেড়েছে ২,৪৭১ কোটি টাকা।
এর কারণ হিসেবে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের দাম এখন ১১২ টাকা। যেখানে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পেতে ১০৭ টাকা খরচ হয়। এ কারণে মানুষ লেনদেনের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে।
কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বৃদ্ধির পেছনে বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীল সরবরাহ ও চাহিদাকেও উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র।
সূত্র বলছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এই বছর পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে অস্থির ছিল। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে গ্রিনব্যাক বিক্রি করে ডলারের হার স্থিতিশীল করতে লড়াই করেছে। এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসে অবদান রাখছে ও টাকাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে নগদ ও কার্ডে ডলার বিক্রি করে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন দেশে দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদিত।
কোভিড-১৯ শুরুর পর ২০২০ সালের জুন থেকে গ্রাহকদের তাদের অ্যাকাউন্টের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড ইস্যু করার অনুমতি দিচ্ছে। দ্বৈত মুদ্রার কার্ড বিদেশে হোটেল বুকিং ও বাড়ি থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের কেনাকাটার অনুমতি মিলেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী, কার্ডের মাধ্যমে বছরে সর্বাধিক ১২,০০০ ডলার খরচ করা যেতে পারে। এই সুবিধা নিয়ে কার্ডধারীরা অক্টোবরে স্থানীয় লেনদেনের জন্য ৩৭,৫৩০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, এ বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর মাসে মানুষ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। যা গত বছর ছিল ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা।