চাঁদা না পেয়ে দখলের চেষ্টা করা হচ্ছিল রাজধানীর এলিফেন্টরোডের কম্পিউটার মার্কেট মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার। ছাত্র-জনতা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধে তা ভেস্তে গেলে গত ১০ জানুয়ারি রাতে টার্গেট করে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে কোপানো হয় দুই কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে। এ নিয়ে ভাইরাল সিসিফুটেজে দেখা যায়, ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত মুখ ঢেকে, হেলমেট পরে এ হামলা চালায়।
এ নিয়ে করা মমলার সূত্র ধরে ঘটনার পরদিনেই গ্রেফতার করা হয়েছে মামলার ৩ নম্বর আসামি আসিফুল হক আসিফ ওরফে ঝন্টু (৩২) ও কাউসার মৃধা (২৪) নামে দুই আসামিকে। গ্রেফতার আসিফ শরীয়তপুরের ডামুড্ডা ৯নং ওয়ার্ডের আব্দুল হক আকনের ছেলে। আর কাউসার মৃধা পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জের কিসমত শ্রীনগরের মোহাম্মদ হালিম মৃধার ছেলে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গত ১৫ ও ১৬ আগস্ট জামিনে ছাড়া পাওয়া অপরাধ জগতের শীর্ষ দুই মাফিয়া নাম। এরা হলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী হাজারীবাগের সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন ও মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল।
প্রসঙ্গত, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে নিউমার্কেট থানায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী দীপু। ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী দীপু মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের বড় ভাই। দায়ের করা মামলার মামলায় এজাহারে বলা হয়, ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব পরবর্তীসময়ে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে দলবদ্ধ হয়ে মার্কেটের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনসহ অন্য আসামিরা মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে হয়রানি করে আসছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জড়িত হিসেবে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ২০-২৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করেন বাদী।
মামলায় প্রধান আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ওরফে ইমন (৫২)। মামলার অন্য আসামিরা হলেন– মুন্না (৪৭), আসিফ ঝন্টু (২৮), একেএম চঞ্চল (৪৩), শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সহযোগী খোকন (৪০), সাইদ আসাদ (৪১), জসিম ও কলা জসিম (৩৫), তুষার ওরফে কিলার তুষার (৩৫), তৌফিক এহসান (৬৩) ও মো. জাহিদ (৪৪)।
নিউমার্কেট থানা সূত্রে প্রকাশ, কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম পিচ্চি হেলাল ও ইমন। তাদের সংস্পর্শে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে এসেছেন। অপরাধের পুরোনো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি চাঁদা চেয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের তৎপরতা দৃশ্যমান। গত ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে জোড়া খুন হয়। ওই দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এলাকার দখল নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধ থেকে জোড়া খুনের ওই ঘটনা ঘটে। তবে ওই ঘটনার পর চার মাসেও পিচ্চি হেলালকে গ্রেফতার করা যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মোহাম্মদপুরে খুনের ঘটনায় পিচ্চি হেলাল গ্রেফতার না হলেও দু-তিনজন গ্রেফতার হয়েছেন। অন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপরও পুলিশের নজরদারি রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী হোক বা যেই হোক, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে মার্কেটের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ বলে জেনেছি। কিন্তু মামলায় আবার আসামি করা হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে। বাদী আবার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের বড় ভাই। তাই এ ঘটনায় দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানিয়েছেন, এক মাস আগে মাল্টিপ্লান মার্কেটে ব্যবসায়ী কমিটির নির্বাচন হয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একটি বিরোধ তাদের মধ্যে আগে থেকেই ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এ নির্বাচনের কারণে ঘটনা হতে পারে। অথবা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। তাই জড়িত সব আসামিকে ধরার চেষ্টা চলছে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন উদ্দিন জানিয়েছেন, এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় করা মামলায় উল্লিখিত ৩নং আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন এক আসামিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফুটেজ ফরেনসিক করে আসামিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি মামলার প্রধান আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে তদন্ত টিমের সঙ্গে ডিবিও কাজ করছে।