আত্মপ্রকাশ করলো বিএমসিসিআই উইমেনস ফোরাম
সময় বদলেছে। বদলছে নারীর ব্যবসায় অংশগ্রহণের ধরণ ও অনুষঙ্গ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেটের শক্তিতে ভার্চুয়াল বাজারে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নারী ফোরাম তৈরি করলো বাংলাদেশ-মালোয়েশিয়া চেম্বর অব কমার্স।
বুধবার রাজধানীর আত্মপ্রকাশের সেমিনারে প্রযুক্তি স্বাক্ষরাতা, ডিভাইস ও অর্থসংস্থানের পাশাপাশি পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোও ওপর গুরুত্বারোপ করলেন খাত সংশ্লিষ্টরা। একসঙ্গে বিদেশে ব্যবসার নলেজ হাব গড়ে তোলার আহ্বান জানান নারী উদ্যোক্তারা। বক্তারা বলেন, পরিবর্তনশীল ডিজিটাল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য যথাযথ প্রযুক্তি জ্ঞান ও শিক্ষার মানোন্নয়ন অপরিহার্য। একইসঙ্গে অর্থের প্রাপ্যতা, ডিজিটাল দক্ষতা এবং সাক্ষরতাও এখন মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা এখনও এখানে পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ-মালোয়েশিয়া চেম্বর অব কমার্স সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবিরের সঞ্চালায় ‘শি মিনস বিজনেস: এমপাওয়ারিং উইমেন এন্টারপ্রেনারস ইন দ্যা ডিজিটাল ইকোনমি’ সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সেলিমা আহমেদ। আলোচক হিসেব উপস্থিত ছিলেন ড. উইমেন এন্টারপ্রেনারস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউইএনডি) প্রেসিডেন্ট নাদিয়া বিনতে আমিন, ই-ক্যাব উইমেন ফোরাম সভাপতি নাজনীন নাহার, উইমেন ইন ই-কমার্স ট্রাস্ট (WE) পরিচালক সৈয়দা লুৎফুন্নাহার ও ব্র্যাক ব্যাংক, তারা এর নারী উদ্যোক্তা সেলের প্রধান খাদিজা মরিয়ম।
বক্তারা ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীদের বিভিন্ন বাধার অভিজ্ঞতা ও তা হতে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তারা জানান কোভিডে সংসারের প্রয়োজনে নারীরা এফ-কমার্স থেকে উদ্যোক্তা হওয়া শুরু করে। শুরুতেই নিজের তৈরি পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন তারা সোর্সিং করছেন। একই সঙ্গে দেশের গণ্ডি পেরিয়েও ব্যবসা করছেন।
আলোচনায় নাজনীন নাহার বলেন, সময়ের সঙ্গে ব্যবসার ধরণও পরিবর্তিত হয়ছে। একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজন কৌশলগত পরিকল্পনা, সঠিক প্ল্যাটফর্ম এবং সঠিক পণ্য বেছে নেওয়া। এ জন্য কারিগরি জ্ঞান এবং অন্যান্য সঠিক জ্ঞান সংগ্রহ অপরিহার্য। এটা সত্য যে মেয়েরা এগিয়েছে, কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তাদের টিকে থাকতে হবে। নারীদের উচিত ব্যবসা এবং এটির চ্যালেঞ্জগুলি বোঝার আগে “ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং যে দক্ষতাগুলি ব্যবসায় টিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা অর্জন করা। মনে রাখতে হবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য সঠিক কৌশল এবং পরিকল্পনা প্রয়োজন।
উই নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মধ্যে নলেজ শেয়ারিং করছে জানিয়ে সৈয়দা লুৎফুন্নাহার বলেন, নারীরা এখনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পুরুষের উপর নির্ভরশীল। এই সামাজিক কলঙ্ক দূর করতে হবে।
খাদিজা মরিয়ম বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক সবসময় নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করে। পরিশোধ ক্ষমতা মূল্যায়ণ করে ব্র্যাক ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের জামানত ছাড়া ঋণ বিতরণ করে। কিন্তু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসার ধারণা বিকাশের ক্ষেত্রে যে অর্থ দরকার তা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নেই।
বিদেশে পণ্য রপ্তানি করার সময় লজিস্টিক, পরিবহন এবং প্যাকেজিং সম্পর্কিত সমস্যা রয়েছে এবং যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে তা দূর করার পরামর্শ দেন প্যানেল আলোচকরা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য সেলিমা আহমেদ বলেন, অতীতে, নারীরা প্রধানত ফ্যাশন, বুটিক এবং বিউটি পার্লারের মতো ব্যবসায় জড়িত ছিল, কিন্তু সময় বদলেছে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও অধ্যবসায়ী মহিলারা চেম্বারে নিজেদের আসন প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই এ ফোরামের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশে সফলভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি নারীরা নিজেদের উন্নীত করছে কিন্তু তবুও, অর্থের অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে যা অতিক্রম করা দরকার।
এজন্য নারী উদ্যোক্তাদের অবশ্যই তাদের সাফল্যের পথে বিভিন্ন বাধা মোকাবেলা ও অতিক্রম করতে দৃঢ় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতি প্রতিদিনই বিকশিত হচ্ছে। এরইমধ্যে দেশে ৫ লাখ মহিলা ফ্রিল্যান্সার হয়েছে। তাদের এই অংশগ্রহণে দেশের বৈদেশিক আয় মিলিয়ন ডলারের সেক্টরে পরিণত হবে৷ এজন্য তিনি নারী উদ্যোক্তাদের শিক্ষা এবং উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।পাশাপাশি তাদের অগ্রগতির প্রচারের জন্য সরকারি সহায়তায় সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে উত্সাহিত করেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার হাজনা মোঃ হাশিম বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ডিজিটাল বিনিয়োগে ১৬.১ বিলিয়ন ডলার ডিজিটাল বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে মালয়েশিয়ার জিডিপির ২২.৫ শতাংশেরও বেশি এই এই খাতে অবদান রাখবে বলে মনে করেন হাজনা। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে নারী উদ্যোক্তাদের দখলে।
তবে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল বলেও মন্তব্য করেন মালোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত। বলেছেন, বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি তার দৃঢ় অঙ্গীকার দেখিয়েছে।
এসময় বিএমসিসিআই ওমেন্স ফোরামের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরও গভীর ও ফলপ্রসূ হবে কারণ মালয়েশিয়াও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে এবং মালয়েশিয়াও তার ডিজিটাল অর্থনীতি বিনির্মাণে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তিনি আশা করেন, বিএমসিসিআই জেন্ডার সমতাকে নিশ্চিত করে নারী উদ্যোক্তাদের দেশের অর্থনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করবে এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নারীরা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয় তা নিরসনে ভূমিকা রাখবে।
স্বাগত বক্তব্যে বিএমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসায়িক জগতে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ দক্ষতা, সঠিক পরামর্শের অভাব, এবং ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধির সীমিত সুযোগ। বিএমসিসিআই উইমেনস ফোরাম এই জায়গাগুলোতে নারী উদ্যোক্তাদের আস্থার যোগান দিতে চায়।
আলোচনার পর, বিএমসিসিআই এবং উইমেন এন্টারপ্রেনারস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউইএনডি), ই-ক্যাব উইমেনস ফোরাম (ইডব্লিউএফ) এবং উইমেন ইন ই-কমার্স ট্রাস্ট (ডব্লিউই)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়।