যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ইসমাইল হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীকে চাঁদার দাবিতে পাঁচ ঘণ্টা নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের একটি কক্ষ থেকে সহপাঠীরা ইসমাইলকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এবং ময়মনসিংহের বলরামপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে।
অভিযুক্তরা হলেন কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সালমান এম রহমান ও একই বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সোহেব আলী। তারা ৫২৮ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এরই মধ্যে সালমান এম রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ। অন্যদিকে, আগেই বিশৃঙ্খলা ও গাঁজা সেবনের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল সোহেব আলীকে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইসমাইল যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে একটি ছাত্রাবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন সোহেব আলী ও সালমান এম রহমান। ইসমাইল চাঁদা দিতে না চাইলে গতকাল রোববার দুপুরে ডিপার্টমেন্টে ক্লাস চলাকালে ওই দুজন তাকে ডেকে হলে নিয়ে যান। এরপর দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইসমাইলকে বেঁধে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে পেটান। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপর রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি (এপিপিটি) বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আল জুবায়ের রনি জানান, ইসমাইল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। রোববার দুপুরের পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি তার ফোনও বন্ধ ছিল। তিনি রোজা ছিলেন। ইফতারের সময় না পাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়।
সহপাঠীরা জানান, হলের সালমান আর সোহেব ক্লাস চলাকালে ইসমাইলকে ডেকে নিয়ে যান। তারপর আর ইসমাইলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সময় সহপাঠীরা হলে গিয়ে খুঁজে দেখেন, ৫২৮ নম্বর কক্ষে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন তিনি। প্রথমে ক্যাম্পাসে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, ৫২৮ নম্বর কক্ষটিতে ছয়জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও ছাত্রলীগ কর্মী সোহেব আর সালমান দুজনই থাকেন। মাদক সেবন ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করার দায়ে সোহেব বহিষ্কার হওয়ার পরও ছাত্রলীগের প্রভাবে হলের নিয়মিত বাসিন্দা। এর আগেও এ দুজনের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের শিবির উপাধি দিয়ে চাঁদা দাবি করারও অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী।