শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার উপাচার্য দ্রুত পদত্যাগ না করলে জরুরি পরিষেবা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। এরপর সন্ধ্যার পর উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বাসভবন ঘেরাও করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর পর রাত পৌনে ৮টার দিকে বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এর আগে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের অনশনের ৯৬ ঘণ্টা পর রোববার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিং করে এই হুমকী দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
এসময় আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরা পাঁচ দিন ধরে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান করে অনশন করছি। এ সময়ের মধ্যে উপাচার্যের বাসভবনে যেকেউ ঢুকছে আবার বের হচ্ছে। বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না। রোববার বিকেলের পর থেকে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা মানবশৃঙ্খল তৈরি করে সেটি নিশ্চিত করবে।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করে যাব, তিনি ভেতরে বসে থেকে সব সুযোগ–সুবিধা ভোগ করে যাবেন, সেটি মেনে নিতে পারছি না। আমাদের আন্দোলন অহিংস, কিন্তু আমাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে নাফিসা আনজুম বলেন, ১৬ জানুয়ারি শাবিপ্রবি উপাচার্যকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন। অবরোধের মাত্র ২ ঘণ্টার মাথায় সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে অহংকার ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে উপাচার্যের নির্দেশে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা সংঘটিত হয়। যেখানে নিরীহ-নিরপরাধ ও নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দমন করতে রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এর প্রতিবাদে বুধবার বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত অনশনকারী শিক্ষার্থীদের অনশনের ৯৬ ঘণ্টা অর্থাৎ ৪ দিন পেরিয়ে গেছে। তারা ধীরে ধীরে সুনিশ্চিত মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছেন। তবুও প্রাণের মায়া ত্যাগ করে তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। আগের ২৩ জনের সঙ্গে আমরণ কর্মসূচিতে আরও ৪ জন যুক্ত হয়েছেন।’
প্রেস ব্রিফিংকালে নাফিসা আনজুম আরও বলেন, ‘এ সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধিদল গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১টায় ভিডিও কলের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেয়। সেখানে উপাচার্যের পদত্যাগ সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট কোনো কথা দেওয়া হয়নি। যেহেতু আমাদের অনশনকারী শিক্ষার্থীদের রেখে আমরা ঢাকা যেতে মানসিক ও দৈহিকভাবে অপরাগ, তাই আমরা ভার্চ্যুয়ালি যেকোনো মাধ্যমে সব আলোচনার জন্য সব সময় প্রস্তুত।’
নাফিসা আনজুম বলেন,‘শিক্ষামন্ত্রী আমাদের অনশন ভেঙে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। সে সঙ্গে রোববার দুপুরে আরও এক দফা বৈঠকে বসার কথা ছিল। তবে সেটি বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত হয়নি। বৈঠকে আমাদের সুস্পষ্ট কিছু অভিযোগ ও দাবি লিখিত আকারে উত্থাপনের জন্য বলা হয়েছিল। সেটি আমরা প্রস্তুত করেছি। আমরা যেকোনো সময় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছি।’