নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সকল ধরণের নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (৯ মার্চ ) সকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি ও কর্মচারী নেতৃবৃন্দ এর আয়োজন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাছুটির বিপরীতে, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের পরবর্তী পদে পদোন্নতির সময়ও প্রায় ১ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এদিকে অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মাস্টার রোল কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
বক্তারা আরও বলেন, নতুন উপাচার্য নোবিপ্রবিতে যোগদানের পর হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তথা একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা মহামারীতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড ল্যাব পরিচালনাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তারা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে ২টি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। তাই তারা নোবিপ্রবিতে সব ধরনের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।
বক্তারা তাদের দাবি পূরণে তিনটি আলটিমেটাম দিয়েছেন। ঘোষিত আলটিমেটামের মধ্যে রয়েছে- আগামী ১৪ মার্চ নোয়াখালী প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি, ২১ মার্চ ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি বিতরণ এবং ২৮ মার্চ আমরণ কর্মসূচি পালন।
এসময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘একটি দেশকে উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করতে হলে সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে উন্নত করতে হবে। বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘ দিনের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচল অবস্থা বিরাজ করছে। এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এখন সময়ের দাবি।’ অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজনুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বছর নিয়োগ নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররোল এবং চুক্তি ভিত্তিক তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই দ্রুতই মন্ত্রনালয় কর্তৃক আরোপিত নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দায়িত্ব নিতে হবে। ৩১ মার্চের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা না তোলা হলে আগামী এপ্রিল মাস হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. দিব্যদ্যুতি সরকার। অস্থায়ী শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অঞ্জন কুমার নাথ ও এ কিউ এম সালাউদ্দিন পাঠান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. জসীম উদ্দিন, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (হিসাব) সাইদুর রহমান প্রমুখ।