ছোটবেলা থেকেই আমার পরিবারের স্বপ্ন ছিল আমাকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু থেকেই পড়াশোনার প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ বিদ্যমান ছিল। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনার প্রতি প্রবল উৎসাহ জেগে উঠে। যথেষ্ট পরিশ্রম এবং প্রতিযোগিতা থেকে আমি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ লাভ করি।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। কোর্সগুলো সম্পর্কে স্বল্প ধারণা, অভিজ্ঞ গ্রুপ মেটদের সংকট, ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা সব মিলিয়ে এক প্রকার টেনশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। উপরন্তু, নতুন নতুন প্রজেক্ট, অ্যাসাইনমেন্ট সব মিলিয়ে এক প্রকার চাপ তৈরি হয়েছিল। যদিও পর্যায়ক্রমে আমি নিজেকে পড়াশোনার প্রেশারের সাথে মানিয়ে নেই। তবে, ক্যারিয়ার প্ল্যান নিয়ে আমি বরাবরই বিভ্রান্ত ছিলাম। আমার পড়াশোনা কিভাবে আমার ক্যারিয়ার লাইফে আমাকে সাপোর্ট দিবে তা নিয়ে আমি বেশ চিন্তায় পড়ি।
এরইমধ্যে একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাই, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করার লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরুতে ‘এনার্জেটিক ফিউচার লিডারশিপ প্রোগ্রাম’ নামে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে জ্বালানি, শক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা খাতে দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাকের পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড। শুরু থেকেই এই প্রোগ্রামটি নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয় আমার।
কথাগুলো বলছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়ে শিক্ষার্থী মো: রাফসান জামিল।
রবিবার (৮ জানুয়ারী) এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড (ইপিজিএল) আয়োজিত “এনার্জেটিক ফিউচার লিডারশিপ প্রোগ্রাম (ইএফএলপি)” ইনটেক-১ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যার লক্ষ ছিল নেটওয়ার্কিং ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদেরকে নিজ নিজ খাতে আরো দক্ষ করে তোলা এবং ক্যারিয়ারকে আরও এগিয়ে নিতে সাহায্য করা। প্রোগ্রামটিতে ১ হাজারেরও বেশি আগ্রহী প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সেরা ২৫ জনকে নিয়ে ইনটেক-১ চালু করা হয়।
বিজনেস কমিউনিকেশন, পারসোনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ক্রিটিকাল থিঙ্কিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, এসসিএম সহ নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ হয় এনার্জেটিক ফিউচার লিডারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহনের মাধ্যমে।
প্ল্যাটফর্মটি মতো অনেক শিক্ষার্থীর দক্ষতা বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে, বিশেষ করে, যারা প্রকৌশল বিভাগে অধ্যয়নরত রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাধারণত কোন কোন বিষয়গুলোর উপর জ্ঞান রাখা জরুরি এবং এর ব্যবহারিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে প্রোগ্রামটির মাধ্যমে।
প্রোগ্রামের ক্রস-ফাংশনাল এক্সপেরিয়েন্স, এক্সপেরিমেন্টাল লার্নিং এবং লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং আমার মত অংশগ্রহণকারী তরুণদেরকে অনন্য অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরো পরিণত করে তুলেছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ও ভার্চ্যুয়াল অংশগ্রহণ মিলে এই আয়োজনটি মোট ৩ মাস ধরে কার্যকর ছিল। বিশেষ আকর্ষণ ছিল, প্রোগ্রামটি শেষে সেরা পারফর্মার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তিন জনকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের এনার্জিপ্যাক কর্তৃক সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
এনার্জিপ্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হুমায়ুন রশীদ বলেন, ‘দেশের প্রকৌশল খাতকে এগিয়ে নিতে এবং ভবিষ্যতের উদ্ভাবনী ধারা ও বৈচিত্র্যময় বাজার চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের আগামী প্রজন্মের প্রকৌশলীদেরকে আরো দক্ষ ও কর্মক্ষম করে তুলতে হবে। এই আয়োজনের শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমরা তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছি, তা নিঃসন্দেহে অভাবনীয়। ১ হাজারেরও বেশি আগ্রহী প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সেরা ২৫ জনকে নিয়ে আমরা আমাদের ইনটেক-১ চালু করেছিলাম, এবং আশা রাখছি ভবিষ্যতে এই কার্যক্রমকে প্রসারিত করার মাধ্যমে আমরা আরো অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে পারবো।’
কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ (বুয়েট) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তামিম বলেন, ‘ক্রস-ফাংশনাল অভিজ্ঞতা, পরীক্ষামূলক শিক্ষা এবং নেতৃত্ব বিকাশের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য এই অনন্য এনার্জেটিক ফিউচার লিডার প্রোগ্রাম (ইএফএলপি) চালু করেছে এনার্জিপ্যাক যা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের প্রত্যাশা দেশের তরুণ প্রজন্মের স্কিল ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে, সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনীতিক সমৃদ্ধি অর্জনে এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে।