‘করোনায় বাংলাদেশের মানুষে মেধা ও সৃজনশীলতার পরিচয়ের প্রমাণ মিলেছে’ জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ২০২১ সালে শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন না, আমরা অনুকরণীয় হতে পেরেছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সফলতার গল্প বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমরা ইতিমধ্যে যা অর্জন করেছি তার থেকে কয়েক লক্ষগুণ সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদেরকে রোবট ব্যবস্থাপনা করতে হবে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৈরি করতে হবে, হার্ডওয়্যার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এজন্য নিজেদেরকে নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে হবে। শুধু সফটওয়্যার রফতানিই আমাদের বাজার নয়, সকল ধরণের ডিজিটাল কার্যক্রমই আমাদের বাজার। একদিন আমরা রোবটও রপ্তানি করবো। আমাদের সবগুলো তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলোতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়ক সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
‘যন্ত্র মানুষের বিকল্প নয়’ উল্লেখ করে এ জন্য মানুষের পাশাপাশি ‘যন্ত্র পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা, আইওটি, রোবট ম্যানেজমেন্ট করতে শিখতে হবে’ বলে উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতাদের তাগিদ দেন বেসিস এর সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, আমি যন্ত্রকে কখনোই মানুষের বিকল্প হতে দেবো না। আমরা এখন সফটওয়্যারের পাশাপাশি যন্ত্রও সরবরাহ করবো। এসময় আলোচক হিসেবে উপস্থিত বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রীকে এআই নির্ভর ইআরপি সল্যুশন দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, এখন আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আমরা তৈরি করতে পারি এমন বিদেশী সফটওয়্যার যেনো আগামীতে আর দেশে না আসে। আমার দেশে আমার দেশের ছেলে-মেয়েদের তৈরি সফটওয়্যারই আমরা দেখতে চাই। সফটওয়্যারের সঙ্গে আইটি অ্যানাবল সার্ভিস থেকেও আমরা রপ্তানি আয় বাড়াতে চাই। আমি মনে করি, আমাদের রপ্তানি হিসাবে আমাদের সকল ডিজিটাল পণ্যকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের পর ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স এর তৃতীয় বৈঠকে আইসটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ স্মার্ট বাংলাদেশের যে প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন তার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের হাতেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলকে। আমরা সবাই মিলেই আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রকে স্মার্ট করে তুলবো।
স্মার্ট বাংলাদেশে আইসিটি খাতের ভূমিকা নিয়ে রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত প্যানেল আলোচনায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী। এসময় তথ্য প্রযুক্তি খাতের সবগুলো সংগঠনের একটি কেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দেন মোস্তাফা জব্বার।
বেসিস এর আয়োজনে প্যানেল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন বেসিস ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু দাউদ খান। আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু , এশিয়ান উনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভিসি ড. রুবানা হক এবং ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ডিউক।
আলোচানর শুরুতে মেড ইন বাংলাদেশ অভিযাত্রার জন্য দীর্ঘমেয়াদী গাইডলাইন করে সরকার স্থানীয় বাজারে দেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুযোগ করে দেবে বলে প্রত্যাশা করেন ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ডিউক। এক্ষেত্রে চলতি বছরের বাজেটকে স্বাগত জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তৈরি পোশাক থেকে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের স্পৃহা, উদ্যোম, কৌতুহল ও উদ্ভাবন এই খাতটির পেছেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এশিয়ান উনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভিসি ড. রুবানা হক। বিজিএমইএ এর সাবেক এই সভাপতি বলেন, আমরা আশা করি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের তৈরি পোশাক খাত পুরোপুরি অটেমেশনে যাবে। তবে এর একজা জ্বালা আছে। তাই এই মুহূর্তে প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থানের মধ্যে একটি সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমাদের যেই পরিমান ইনোভেশন লাগবে তা আমাদের আইটি কোম্পানিগুলো অহরহ দিতে পারে। যেমন আমরা চাইলেই দেড় বিলিয়স ডলারের মতো খরচ করে রপ্তানি করা ওয়াশিং মেশিন এখানেই তৈরি করতে পারি। এক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাটা বড় চ্যালেঞ্জের। দুই খাত একসঙ্গে কাজ করলে সহজেই এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে মানব সম্পদ দক্ষতা ক্যাপাসিটি, ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন ও পিপিপি মডেল প্রণয়নের জন্য সরকরারের প্রতি আহ্বান জানান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্য দেয়া বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।