অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল বন্ধ করায় ও পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ায় স্কুলগামী কিশোরকিশোরীরা উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় ভুগছে। ঢাকার বস্তি এলাকা ও স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে করা একটি গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা আরও জানিয়েছে, স্কুলে শিক্ষকের সহায়তায় পড়াশোনা করা যতটা সহজ, বাসায় বসে পড়াশোনা করা তার চেয়ে বেশ কঠিন। কারণ, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের কাছ থেকে পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও নোট করার ব্যাপারগুলো স্কুল বন্ধ থাকায় কেউ পাচ্ছে না।
মঙ্গলবার “ইয়াং পিপল’স ভয়েসেস ডিউরিং কোভিড-১৯: হাউ দ্য প্যানডেমিক অ্যাফেকটেড অ্যাডোলেসেন্টস ইন আরবান স্লামস অ্যান্ড লো-ইনকাম সেটেলমেন্টস ইন ঢাকা” শিরোনামের ভার্চুয়াল সভায় এই ফলাফল ও উপাত্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি), জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এবং ইনোভেশন ফর পোভার্টি অ্যাকশানের করা এই গবেষণাটি জেন্ডার অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্স কর্মসূচীর আওতায় করা হয়েছে। আর ইউকে এইডের মাধ্যমে এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে ইউকে সরকার। দুটি ধাপে এই গবেষণাটি করা হয়েছে যার প্রথম ধাপ হয়েছিল ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। ২য় ধাপে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে আবারও একই ব্যক্তিদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। এর লক্ষ্য ছিল বস্তি ও স্বল্প-আয়ের বসতিতে বসবাসরত কিশোরকিশোরীদের উপরে দেশব্যাপী লকডাউন ও মহামারীর প্রভাব কেমন তা জানা।
গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে যে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের অপ্রতুলতার কারণে এসব এলাকায় বসবাসরত কিশোরকিশোরীরা পড়াশোনার পিছিয়ে পড়ছে। উপরন্তু, শিক্ষা, গৃহস্থালী কাজ, চলাফেরার স্বাধীনতা ও মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর প্রভাব কিশোর ও কিশোরীদের ওপরে বেশ আলাদা।
তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, “মহামারীর কারণে যে ভুল তথ্যেরও মহামারী তৈরি করেছে তা এই গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে এই গবেষণার ইতিবাচক দিক হচ্ছে নিম্নআয়ের পরিবার থেকে উঠে আসা কিশোর-কিশোরীরাও করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সচেতন।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও অ্যাকসেলারেটিং প্রোটেকশন ফর চিলড্রেন-এর প্রকল্প পরিচালক এস এম লতিফ কিশোর-কিশোরীদের জন্য সরকারের উদ্যোগগুলো তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আমরা জাতীয় কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য কৌশল গ্রহণ করেছি। যার চারটি মূল লক্ষ্য হলো- কিশোর-কিশোরীদের যৌন স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরী নিগ্রহ, কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি এবং কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য।”
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, “কোভিড- ১৯ এর কারণে সৃষ্টি হওয়া বৈষম্য কমিয়ে আনতে আমাদের যা সম্পদ ও প্রযুক্তি আছে তা নিয়েই প্রতিকারমূলক শিক্ষার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে।”
ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ডিন এবং অধ্যাপক ড. সাবরিনা এফ রশিদ বলেন, “এই সব কিশোর-কিশোরীদের মহামারীকালে সমমনাদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মতো বিভিন্ন বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর এসবের কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়েছে।”
অনুষ্ঠানে গবেষণায় পাওয়া তথ্য ও ফলাফল তুলে ধরেন বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো অব প্র্যাকটিস এবং জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশনের প্রধান মাহিন সুলতান এবং ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ এর সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ফর জেন্ডার, সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস এর সহকারী পরিচালক ফারহানা আলম। গেজ ইথিওপিয়ার গবেষক ওর্কনেহ ইয়াদেতে, জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. জেনিফার সিগার ও গণমাধ্যমকর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।