গত এক দশকে বাংলাদেশের শিল্প খাতের সক্ষমতা, বাজারের আকার এবং দক্ষ কর্মী বেড়েছে নাটকীয় সংখ্যায়। এক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্য অনুযায়ী বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের আইসিটি খাত। এর প্রমাণ স্বরূপ বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা দোহা টেক এর তৈরি ই-জিপি সফট নামে সমাধান নিয়ে এসেছে তা এখন দেশে দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকা অগমেটিক্স এখন প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হেলথ টেকে এগিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন হাসপাতালগুলোতে সেবা দিচ্ছে। এখন দেশের সাত লাখ তরুণ আইটি ফ্রিল্যান্সিং করছে। বিশ্বের মোট চাহিদার ১৬ শতাংশ আউট সোর্সিং করছে বাংলাদেশের তরুণরা। এআই, মেশিন লার্নিংয়েও তারা ভালো করছে। এমন সব অর্জনে আমাদের জিডিপির আকার ভিয়েতনামকে ছাপিয়ে এখন সিঙ্গাপুরের সমান।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) ও যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস যৌথ আয়োজনে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ২৯তম ইউএস ট্রেড শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমনটাই দাবি করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, আগামী দুই দশকের কথা ভেবে এখনই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা দরকার। আগামীর জাপান ও কোরিয়া হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
তার ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের দেশের করকাঠামো ঢেলে সাজানো দরকার। আমাদের স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। সব বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশে এরই মধ্যে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি, অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবসা সবচেয়ে লাভজনক। তবে দেশে অনলাইনে ব্যবসায় এখনো বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে। অনলাইনের পরও অফলাইনে প্রসেস করতে হচ্ছে। এগুলো সমাধান করতে হবে।
একই সঙ্গে করদাতাদের ওপর করভার না বাড়িয়ে করের আওতা সম্প্রসারণে রাজস্ব বোর্ডকে পুরোপুরি ডিজিটাল হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
অ্যামচ্যাম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বললেন, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ৪ বিলিয়নের বেশি ডলার বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানিও হয় বাংলাদেশ থেকে। দেশের ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন মার্কিন ইলেকট্রনিক টার্বুলেটরের মাধ্যমে। বিগত দশকের অর্থনৈতিক সফলতা বলছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসেবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হতে পারে বাংলাদেশ। ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি আমেরিকার বাজারেও ভালো করছে বাংলাদেশ।
এসময় অনুষ্ঠানে মার্কিন দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ওরাকল বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুবাবা দৌলা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন দূতাবাসে স্বতন্ত্র্য ভাবে একটি কমার্সিয়াল সার্ভিস অফিসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এই অফিসের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে দেশি-বিদেশি ৪৪টি প্রতিষ্ঠান ৭৭টি স্টলে ১০০টিরও বেশি আমেরিকান পণ্য প্রদর্শন করছে। উদ্বোধনী শুরুর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে নারীর ক্ষমতায়ন’ নিয়ে একটি সেমিনার।
এছাড়াও ‘আমদানিকারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির অনুমোদন’, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা ও শিক্ষার্থী ভিসা’,‘বেসরকারি খাতে ইউএস এইডের উন্নয়ন কর্ম’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা ও ব্যবসায়ী ভিসা’ নিয়ে আরো চারটি সেমিনার হবে ট্রেড শো চলাকালে।