জীবন বাজি রেখে হলেও পাওনা আদায়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন চাকুতিচ্যুত গ্রামীণফোন কর্মীরা। রবিবার বসুন্ধরা বারিধারাতে অবস্থিত জিপি হাউসের সামনে পূর্ব ঘোষিত লংমার্চ কর্মসূচীর প্রথম দিন এই ঘোষণা দেন তারা।
চাকুরিচ্যুত ও অধিকার বঞ্চিত গ্রামীণফোন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’র তিন দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচী অনুযায়ী, কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের ৫% অংশগ্রহন তহবিল বিলম্ব জরিমানা আদায়ের দাবি নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করছে বিক্ষুব্ধরা।
এসময় গ্রামীণফোন ম্যানেজমেন্টকে হুঁশিয়ার করে মোবাইল অপারেটরটি চাকরিচ্যুত সিনিয়র টেরিটরি ম্যানেজার আবু সাদাত মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, এখানে যারা এসেছি তারা প্রত্যেকেই একেকটি সিংহ। সিংহের লেজ দিয়ে কান চুলকাবেন না। সিংহ যখন ঘুরে দাাঁড়াবে, নিজের অবস্থান ও পায়ের নিচ থেকে মাটি সরিয়ে দেবো আমরা। এই খেলা বেশি দিন খেলতে পারবেন না। আলোচনায় বসুন। মটকা গরম করালে কিন্তু খেলা ঘুরে যাবে।
বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদি কায়দা-কানুন চলবে না এমন শতর্ক বার্তা উচ্চারণ করে সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের আহসান প্রশ্ন রাখেন কমপ্লায়েন্স কোম্পানি হলে কেন আমাদের পাওনা চাইতে কোর্টের বরান্দায় ঘুরতে হবে? রাস্তায় নামতে হবে? ব্র্যান্ডভ্যালুর কথা বলে গ্রামীণফোনের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদ এখন চরম বেহায়া ও নির্লজ্জ আচরণ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘প্রিয় গ্রামীণফোন’ সম্বোধন করে টেরিটরি ম্যানেজার তানভীর হাসান নবাব আলীবর্দী খাঁ থেকে শুরু করে এই বাংলায় যত শোষক এসেছে তাদের রুখে দিতে এই বাংলায় যুগে যুগে এসেছে তিতুমীর সূর্য সেন। তাই আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের পাওনা মিটিয়ে দিন।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, ২০১০ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপন কে উপেক্ষা করে গ্রামীণফোন শ্রমিকদের মুনাফার ৫% বিতরন না করে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে (৩৪৬৬/২১১)। ২০১৪ সালে আদালতের রায়ের বিপরিতে ও শ্রমিকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২০১৫ সালে মুনাফার মুল টাকা বিতরন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু বিলম্ব জরিমানার বিষয়টি সমাধান না করে মামলাকে প্রলম্বিত করে আইনি কূটকৌশল প্রয়োগ করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে চলে। তারই ধারাবাহিকতায় শ্রমিকরা আদালতে অগ্রসর হলে গ্রামীণফোন২০২৩ সালে অনিষ্পন্ন রিটটি প্রত্যাহার করে। যার ফলে গ্রামীণফোন স্বীকার করে নিয়েছে যে তারা আইনের বিপরিতে ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক ভাবে বিলম্ব জরিমানার টাকা বিতরন না করে পতিত স্বৈরাচারের দুর্নীতি-বাজ মন্ত্রী আমলা দের সহযোগিতায় অসৎ উদ্দেশ্যে বার বার আইনি মারপ্যাঁচ ব্যাবহার করে বিষয়টিকে প্রলম্বিত করে চলেছে। বক্তারা আরাও বলেন চাকুরিচ্যুত শ্রমিকদের স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর কতিপয় কর্মকর্তা ও আওয়ামী মদতপুষ্ট ইউনিয়ন নেতারা অনৈতিক ও অমানবিক প্রক্রিয়া ব্যাবহার করে চাকুরী ছাড়তে বাধ্য করেছে।
কর্মসূচীতে শ্রমিক নেতারা আরো বলেন, আওয়ামীলীগ এর দোসর সিইও ইয়াসির আজমান সরকারের মন্ত্রী, এম পি, আমল-প্রশাসন ব্যাবহার করে দেশের সবচেয়ে লাভজনক কোম্পানিতে বিনা বাধায় দেশের আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বিচারে শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। দুর্নীতির পথে কোম্পানিকে পরিচালনা করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করেছে, পাশাপাশি সরকারের শত শত কোটি টাকা কর ফাকি দিয়েছে।
সমাবেশ শেষে বক্তারা বিষয়টি আশু সমাধানের জন্য গ্রামীণফোন এর নিকট আলোচনায় বসার আহ্বান জানান এবং দ্রুত সময়ে দাবী না মানলে লাগাতার কর্মসূচির পাশাপাশি বৃহত্তর আন্দোলনে অগ্রসর হবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর চাকুরিচ্যুত শ্রমিকরা ৩ দফা দাবী আদায়ের লক্ষে লাগাতার কর্মসূচির পালন করে চলেছে। আন্দোলনের প্রথম দিনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।