ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে টেন্ডারে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের পথ উন্মুক্ত করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। একইসঙ্গে অ্যাক্টিভ শেয়ারিং সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্যাবলের অপচয় রোধে বিটিআরসি’র প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কম্পিউটার ল্যাব ও কনটেন্ট এর পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে এনসিটিবি-কে সক্রিয় করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকেই দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী। এছাড়াও ৫জি সম্প্রসারণে মোবাইল অপারেটরদের ধীর গতি বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামের কোথাও কোথাও ৪জির বদলে ২জি মানের নেটওয়ার্ক থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন মোস্তাফা জব্বার।
মঙ্গলবার ঢাকার হোটেল সোনারগাঁয়ে বিটিআরসি, এটুআই এবং এলায়েন্স ফর এফোর্ডেবল ইন্টারনেটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কানেক্টিভিটি ফর এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন্স ফর ব্লেন্ডেড এডুকেশন বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২০ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমন অভিব্যক্তিই প্রকাশ করেন তিনি।
মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, শিক্ষা মৌলিক অধিকার এবং এটি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের দায়িত্বও রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে ডিজিটাল সংযোগ ও মানসম্মত কনটেন্ট অপরিহার্য। ডিজিটাল কনটেন্ট মানে পাঠ্যসূচির পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা নয়, কনটেন্ট অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। প্রচলিত শিক্ষা শ্রেণিকক্ষ থেকে ডিজিটাল রূপান্তরের কাজ সম্পন্ন করা আবশ্যক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের মহাসড়ক তৈরিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিযে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী ফাইভ-জি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে মোবাইল অপারেটরসমূহ যাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সে জন্য বিটিআরসিকে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তৃণমূল থেকে শুরু করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ডিজিটাল শিক্ষার জন্য শিক্ষকদেরও ডিজিটাল উপযোগী দক্ষতা প্রদান করতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ডিজিটাল শিক্ষা প্রদানের উপযোগী করতে না পারলে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ডিজিটাল শিক্ষা ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত মোস্তাফা জব্বাার বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়ক তৈরি করে দিবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে হবে তবে আমরা কারিগরি দিকটি দেখবো বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী করোনাকালে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, টেলিভিশনের মাধ্যমে যে পাঠদান দেয়া হয় তা ওয়ানওয়ে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের কাছে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না। দেশে মিশ্র শিক্ষা প্রচলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা‘র গৃহীত কর্মসূচিকে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইভার সংযোগ স্থাপন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছি। দেশের দুর্গম অঞ্চলে অপটিক্যাল ফাইভার নেটওয়ার্ক স্থাপন সম্ভব না হওয়ায় আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ এর মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করছি।
বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: আবু বকর সিদ্দিক, এটুআই-এর সিনিয়র পলিসি এডভাইসার আনীর চৌধুরী এবং এলায়েন্স ফর এফোর্ডেবল ইন্টারনেটের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অঞ্জু মঙ্গল ব্ক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসি‘র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।এলায়েন্স ফর এফোর্ডেবল ইন্টারনেটের ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর শহিদ উদ্দিন আকবর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও প্রতিবন্ধীসহ সকলের জন্য উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্রডব্যান্ড নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ফাইভ-জি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে মোবাইল অপারেটরসমূহ যাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশ্বস্ত করে বলেন এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইভ জি সম্প্রসারণ শুরু হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি,ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনসহ শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন। তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় ব্রডব্যান্ড পলিসির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল ও গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা মিলে একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে প্রবেশ করা, যাতে দেশের প্রান্তিক এলাকাসহ সকল শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ পায়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ব্রডব্যান্ডের মুল কানেক্টিভিটি সরকারের হাতে রেখে গ্রাহক পর্যায়ের কার্যক্রম বেসরকারি খাতে প্রদান করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলে তা ফলপ্রসু হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যে সব মোবাইল অপারেটর কর্তৃক ফাইভজি চালু করা হবে জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২২ প্রণয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, প্রযুক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা, নারী, শারিরীকভাবে অক্ষম জনগোষ্ঠীসহ অনানুষ্ঠানিক খাতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২২-এ ব্লেন্ডেড শিক্ষা বাস্তবায়নে ডিজিটাল কানেক্টিভিটির স্থাপনের গুরুত্ব বিষয়ে বিশদ উপস্থাপনা প্রদান করেন বিটিআরসি’র সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রি: জে: মো: নাসিম পারভেজ। তিনি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপনের পরিকল্পনায় সকল অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বাস্তবায়নে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের গুরত্ব, সার্বক্ষণিক কারিগরি জনবল ও মনিটরিং ব্যবস্থা, সেবার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।