ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্স দেয়ার এক যুগ পর বেসরকারি আইআইজি ও এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সেবামূল্য (ট্যারিফ) বেধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। একইসঙ্গে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘গ্রেড অব সার্ভিস’ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টম্বর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই নিয়ম।
এর মাধ্যমে সারাদেশে ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাবহারের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এক দেশ এক রেটে দেশজুড়ে বাস্তবায়িত হবে মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা। ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে এবং অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুযোগ তৈরি করবে এই সেবার মাধ্যমে।
অংশীজনদের সঙ্গে মোট ৩৭ দফা বৈঠক করে এই ট্যারিফ এবং গ্রেড অব সার্ভিস প্রণয়ন করেছেন ব্রডব্যান্ড ট্যারিফ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির এসএস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারাল নাসিম পারভেজ।
ঘোষিত বর্তমান বাজার মূল্য থেকে এক দেশে এক মেট্রো হিসেবে বিভাগীয় সিটি করপোরেশনসহ নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও গাজীপুরে এনটিটিএন এর জন্য মেট্রো ট্যারিফে মোট্রো এলাকায় ২০ থেকে ৩২ শতাংশ এবং ডিস্ট্রিক টু ডিস্ট্রিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ মূল্য ও আইআইজির ক্ষেত্রে ১ থেকে ৯ শতাংশ মূল্য কমিয়ে ট্যারিফ ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ট্যারিফ ও গ্রেড অব সার্ভিস সেবার উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
চালুকৃত নতুন ট্যারিফের আওতায় এনটিটিএন অপারেটরদের সকল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৬ টি প্রোডাক্টের প্রতি এমবিপিএস ডাটার ট্রান্সমিশনের জন্য ১৩ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, জেলা থেকে জেলায় (District to District) ১৫টি প্রোডাক্টের জন্য ১৩ টাকা হতে ৩০০ টাকা এবং দূরবর্তী অঞ্চলের (Long Haul Areas) ১৫টি প্রোডাক্টের জন্য ২৫ থেকে ৫০০ টাকা ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় জরিমানাসহ (গ্রেড অব সার্ভিস বজায় রাখা শর্তে) কোয়ালিটি অব সার্ভিস এবং কোয়ালিটি অব এক্সপেরিয়েন্সকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি সেবার মানদন্ড নির্ধারণে ৫টি গ্রেড (এ,বি,সি,ডি,ই) চালু করা হয়েছে।
এছাড়া, সারাদেশে আইএসপি সেবার ক্ষেত্রে গত ৬ জুন তারিখে প্রান্তিক পর্যায়ের জন্য চালুকৃত ট্যারিফ প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় জরিমানাসহ (গ্রেড অব সার্ভিস বজায় রাখা শর্তে) কোয়ালিটি অব সার্ভিস এবং কোয়ালিটি অব এক্সপেরিয়েন্সকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি সেবার মানদন্ড নির্ধারণে ৩টি গ্রেড (এ,বি,সি)চালু করা হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে মানুষ আজ ডিজিটাল সেবার সুযোগ পাচ্ছে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ মোঃ রফিকুল মতিন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়তে এবং প্রান্তিক জনগণকে স্বপ্লমূল্যে সেবা দিতে ট্যারিফ নির্ধারণ জরুরি ছিল। দেশে সরকারি বেসরকারি এনটিটিএন মিলে প্রায় এক লক্ষ কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে উল্লেখ করে সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ আল ইসলাম সরকারি এনটিটিএন অপারেটরগুলোকে এক দেশ এক রেটে আসার আহবান জানান। মোবাইল অপারেটরদের জন্য ট্যারিফ নির্ধারণের অনুরোধ জানান তিনি।
এনটিটিএন ও আইআইজির ওপর ট্যারিফ নির্ধারণকে স্বাগত জানিয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব আমিনুল হাকিম বলেন,আগামীতে প্রতিটি জেলায় পয়েন্ট অব প্রেজেন্স(পপ) স্থাপন হলে গ্রাহক মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাবে। তাছাড়া তিনি আগামী ২৬ মার্চ ২০২২ তারিখ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ এমবিপিএসের খরচে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর ঘোষণা দেন ।
দূর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সেবা নিতে খরচ বেড়ে গেলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নে ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, ট্যারিফ নির্ধারণের ফলে মেট্রোপলিটন এলাকার পাশাপাশি জেলার গ্রাহকগণও কাঙ্খিত সেবা পাবে।
টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়ে কাজ করার কথা উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যেমন- এক দেশ এক রেট, এনইআইআর, অর্ধেক খরচে বাংলায় এসএমএস সুবিধা, টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম ক্রয়সহ গ্রাহকের কোয়ালিটি অব সার্ভিস ও কোয়ালিটি অব এক্সপেরিয়েন্স নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন । আজকের এই পদক্ষেপ এর সুফল যেন গ্রাহক পর্যায়ে নিশ্চিত হয় এ বিষয়ে তার দিকে যথাযথ মনিটরং থাকবে বলে নিশ্চিত করেন এবং অবৈধ আইএসপি বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মোঃ মুহিউদ্দিন আহমেদ, লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হুসেইন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার এ.কে.এম শহীদুজ্জামান, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মোঃ দেলোয়ার হোসাইন,স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শহীদুল আলম, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ এহসানুল কবির, লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্স বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের মহাপরিচালক প্রকৈাশলী মোঃ মেসবাহুজ্জামানসহ পিজিসিবি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, এনটিটিএন ও আইআইজিএবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।