সুবিধা কাজে লাগিয়ে অসুবিধা দূর করতে এই আইন : আইন মন্ত্রী
ঝুঁকি মোকাবেলা করে স্বয়ংক্রিয় সেবার বহর বাড়াতে এআই আইন : পলক
প্রতিষ্ঠার ৭ মাসের মধ্যে যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হয়ে উঠেছে জরাজীর্ণ। এ আই দিয়ে তৈরি এমন বিভ্রান্তিকর ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। এমন ধোঁকাবাজি ছবি, ডিপফেইক ভিডিও ও ভয়েস ক্লোনিং এর মতো ঝুঁকি মোকাবেলা করতে আগে ভাগেই ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। সেই সূত্র ধরে এরই মধ্যে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ‘কনস্টিটিউশন জিপিটি’র মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় সেবায় এআই টুল ব্যবহার করে জাতীয় নিরাত্তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
সেই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনের সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন ২০২৪’ প্রণয়নের জন্য বহুপক্ষীয় অংশীজনের উপস্থিতিতে সংলাপ অনুষ্ঠানে এমনটাই জানানো হয়েছে। অংশীজন সভায় নৈতিকতা, সাংস্কৃতি, ধর্মীয় ও জাতীয় মূল্যবোধে ভিত্তিতে ‘এআই আইন’ প্রণয়ণের পরামর্শ দেন বিটিআরসি মহাপরিচালক খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, এআই আমার কাছে ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’। তাই, নৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় মূল্যবোধ বিবেচনায় নিয়ে এআই আইন করা দরকার।
মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুপ ফারুক বলেন, আমাদের শিল্পের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে এআই আইন করা উচিত হবে। বৈশ্বিক বিবেচনায় দায়িত্বশীল এআই জরুরী। ফান্ডামেন্টাল জেনারেল ইউজের ক্ষেত্রে সুযোগ রাখতে হবে। বৈশ্বিক যে ৬টি প্রিন্সিপাল রয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত করে এই আই আইন করতে হবে। অষ্টম শ্রেণী থেকেই এআই অন্তর্ভূক্ত করা দরকার।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, এআই একটি কম্পোজিট বিষয়। তাই এই আইন অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা দরকার। বেশিরভাগ ডিপফেইক হয় করপোরেট লেভেলে। এক্ষেত্রে নির্দেশ দাতা না কোডার- দায় কার হবে প্রশ্ন রাখেন তিনি। তাই আইন করার আগে ইউজ কেইস ও অপরাধকে আগে চিহ্নিত করে এর অপপ্রোয়গ না হওয়ার বিষয়ে যুক্ত করেন এই গণমাধ্যম কর্মী।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, আইন করার আগে এর দর্শনটা জরুরী। এআই এখন আস্ত একটা সফটওয়্যার বানিয়ে দেয়। ১০ জন সফটওয়্যারের ৩০ দিনের কাজ ৩ দিনে করে দেয় এআই। এটা আমাদের চিন্তার বিষয়। এআই এর অগ্রগতি দৌড়ের সঙ্গে আমরা কতটা এগিয়েছি তা ভাবতে হবে। তাই আশঙ্কা না সম্ভাবনা তা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়েই তাই গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে তা নির্ণয় বন্ধ থাকার মতো এআই নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
সভায় ‘এআই এর জন্য চাকরি হারানো ব্যক্তিদের জন্য সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান বিটিআরসি’র সাবেক মহাপরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এআই এর কারণে যখন কেউ চাকরি হারাবে তখন পরবর্তী চাকরি না পাওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারকে তাকে ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও ডেটা লিক হলে ব্যাড অ্যাক্টররা অ্যাক্টিভ হয়। তাই তথ্য সুরক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে বিদ্যমান আইনের সঙ্গে নতুন এআই আইন যেন সাংঘর্ষিক না হয় সে বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করা দরকার।’
ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার বলেন, কৃ্ত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার করছে শিক্ষার্থীরা। তাই এটা আমাদেরকে গ্রহণ করতেই হবে। একইসঙ্গে এর ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে সেখানে আগাম ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইম রেজা বলেন, নতুন এআই আইন আসন্ন ওটিটি;র মতো আইনের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া দরকার। শিক্ষার ক্ষেত্রে সমন্বয় জরুরী।
ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ড কমিশন সদস্য সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, এআই এর ইথিক্যাল ইস্যু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই ইউজিসি-তে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী বলেন, ওভার রেগুলেশন করতে গিয়ে যেনো আমরা এআই এর সুযোগ হাতছাড়া না করি। এটা কোনো দেশের সরকারের অধীনে নেই। এটা বিগ টেকের হাতে। তাই তাদের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে।
সভায় ২৬ জনের মতো সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতারা এআই আইন নিয়ে নিজেদের মত তুলে ধরেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারওয়ার ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ।
স্বাগত বক্তব্যে ‘এআই-কে উদ্ভাবন, অনুশাসন ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে’ বলে জানান জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, আমরা এআই এর অসৎ ব্যবহার রোধ করতে চাই। ইথ্যিকাল চার্চার মাধ্যমে এআই দিয়ে স্বয়ংক্রিয় সেবার বহর বাড়াতে চাই। সে জন্য এরই মধ্যে আমরা এআই ব্যবহার করে কিছু দিন হলো একটি কনস্টিটিউশন জিপিটি তৈরি করেছি। রেগুলেটরের মাধ্যমে আমরা সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবো।
প্রধান অতিথি আনিসুল হক বললেন, ‘সুবিধা কাজে লাগিয়ে অসুবিধা দূর করতে এই আইন করতে হচ্ছে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট প্রজন্ম গড়ে তুলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অত্যন্ত প্রয়োজন। অংশীজনদের নিয়েই আমরা এই খসড়া চূড়ান্ত করবো। এআই আইন তৈরি করতে পলিসির সঙ্গে আইনের সমন্বয়ে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকবো। শিগগরিই একটি ড্রাফট আউট লাইন করবো। এরপর আবার অংশীজন সভা হবে। সেই ড্রাফ্টে মতামত কতটা অন্তর্ভূক্ত হলো তা দেখা যাবে।
সময় এবং প্রয়োজনে যেনো দ্রুত আইনটি পরিবর্তন রাখা যায় সেই সুযোগ খসড়া আইনে রাখার আহ্বান জান বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতিটি প্রযুক্তির গুড অ্যান্ড ব্যাড সাইড রয়েছে। তাই ভালোটি গ্রহণ করে খারাপটি মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের অর্জন করতে হবে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ইডিজি প্রকল্প পরিচালক আব্দুল বারী জানান, দুই মাসের মধ্যে এই আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। এসময় দেশে-বিদেশের এআই অনুশাসন ও আইনের ওপর আলোকপাত করেন তিনি। জানালেন, এ বছরের মার্চে পাশ হয় ইইউ এআই আইন। এরই মধ্যে ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ করেছে। জুন-জুলাই মাসে ভারতে এআই আইন পাশ হতে পারে। বাংলাদেশের আইনে আমরা ডিজিটাল ডেটা, ডিপ ফেইক, বায়োমেট্রিক, নৃগোষ্ঠী ইত্যাদি বিষয় সংবিধানের আলোকে করা হচ্ছে। আইনে নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।