প্রাথমিক স্কুল থেকেই সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সবার আগে ই-বর্জ্যের ঠিকানা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে অবিলম্বে স্বতন্ত্র ই-বর্জ বিন স্থাপনে তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
শনিবার দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ব ই-বর্জ্য দিবস উপলক্ষে কাওরান বাজারের ভিশন ২০৪১ টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বোরোপ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে ই-বর্জ্য কমানো ও ব্যবস্থাপনায় জরুরী ভিত্তিতে কাজ করা দরকার। কেবল যদি ইন্টারনেট ক্যাবল শেয়ারিং চালু করা যায় তবে এই তারের ব্যবহার ১০০ ভাগের এক ভাগে নেমে যাবে। এতে করে বর্জ্যও কম হবে। তবে সামনের দিনে ব্যাটারি সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সেজন্য মেয়াদ উত্তীর্ণ ব্যাটারি কিংবা ল্যাপটপ, পিসি, রাউটার যত ইলেকট্রনিক্স পণ্য আছে তা কীভাবে পুণঃব্যবহার করা যায় সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের কম্পিউটার আমদানী কারক এবং ডিস্ট্রিবিউটাররা যেনো নিজেদের উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার অনুপোযোগী হলে তা গ্রাহকের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিতে প্রণোদনা মূলক উদ্যোগ নেন সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের নিয়ে গবেষণায় মনোযোগী হতে হবে। তাছাড়াও বিটিআরসি-যেনো আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই দেশে উৎপাদিত ফোন ই-বর্জ্য হিসেবে বিনষ্ট না করে ফিরিয়ে নেয় সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের ডীন এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন।
মূখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), বিভাগের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিসিআইয়ের ইনোভেশন এবং রির্সাচ সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাণিজ্যিক মন্ত্রণলয়ের সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমার্স সেলের উপ পরিচালক মোহাম্মদ সাইদ আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার এবং আইএসপিএবি ইমদাদুল হক।
সেমিনারে সন্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি শহীদ মুনীর ও বক্কোর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজা পারভীন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের সহ-প্রধান অধ্যাপক শেখ রাশেদ হায়দার নূরি, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং জেআর রিসাইকেলিং সল্যুশনের জেনারেল ম্যানেজার মঞ্জুর আলম।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিআইজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান।
এর আগে সকালে ‘এনিথিং উইথ এ প্লাগ, ব্যাটারি এন্ড ক্যাবল প্রতিবাদ্যকে ধারণ করে বিভিন্নভাবে পুন:ব্যবহার যোগ্য ই-বর্জ্য কে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করার অভিপ্রায়ে সঠিক পদ্বতিতে ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সচেতন করতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে একটি র্যলি করে। ই-বর্জ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্লাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে র্যালিটি শেষ হয় দোয়েল চত্বরে গিয়ে। র্যালিতে ‘সম্পদ হবে ই-বর্জ, আমরাই করবো এই কার্য‘ স্লোগান দেয় র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা।
সমাবেশে দেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গণসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেছেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে এই যাত্রাপথে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান বিশেষ করে স্মার্টফোন , কম্পিউটার এবং গৃহস্থালী ইলেট্রনিক পন্য। আর এই পন্য হতে বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হয় । অথচ সঠিক পদ্বতিতে এই বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করতে পারলে এই বর্জ্যই হতে পারে সম্পদ। এবং এই সম্পদের বাজার আয়তন প্রায় ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা, কেবল সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমরা দখল করতে পারিছি না। তাই প্রযুক্তিপণ্য বা ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহারে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট হওয়ার সময় এখনই।
দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই দিবস পালন ‘সময়ের দাবি’ মন্তব্য করে বক্তারা আরো বলেন – ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গণসচেতনতার পাশাপাশি পণ্য প্রস্তুতকারীদের বা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এই বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সাথে ই-বর্জ্যের ঝুঁকি হতে পরিবেশ রক্ষায় আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।