আইপিটিভি হচ্ছে ইন্টারনেটভিত্তিক ভিডিও সম্প্রচার মাধ্যম। প্রচলিত টিভির বিকল্প হলেও কারিগরি দিকে এই টিভি অনেক সহজলভ্য। এর পুরো নাম-ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন, ওয়েব টিভি নামেও এটি পরিচিত। ইন্টারনেটে যুক্ত যে কেউ এই টিভি দেখতে পাবে।
ইন্টারনেটে সহজেই মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট বা অডিও-ভিডিও আদান-প্রদান করা যায়। এ সুবিধাটিই কাজে লাগানো হয়েছে আইপিটিভিতে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন আইপিটিভি খোলা হচ্ছে। বাংলাদেশেও বাড়ছে আইপিটিভি ব্যবহার।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট টিভি সম্প্রচার করার অনুমতি পেয়েছে ২৩টি কোম্পানি। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সাড়ে চার মাসের মাথায় এই অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। অনুমতি প্রাপ্তদের মধ্যে রেডিয়েন্ট ও বিডিকম ওটিজি আইপিটিভি সেবা চালু করলেও আরও পাঁচটি কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
আইপিটিভি খুলতে খরচ কম। এর জন্য স্যাটেলাইট সিগন্যাল, টেরেস্ট্রিয়াল, কেব্ল, টেলিভিশনের দরকার হয় না। কেবল ইন্টারনেট সংযোগ, ইন্টারনেট উপযোগী ডিভাইস ও সফটওয়্যার হলেই হয়। এ টিভিতে রিয়াল-টাইম ট্রান্সপোর্ট প্রটোকল (আরটিপি) ও রিয়াল-টাইম কন্ট্রোল প্রটোকল (আরটিসিপি) প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে আন্দোলন-বিক্ষোভ বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার সরাসরি সম্প্রচারে আইপিটিভি ব্যবহার হচ্ছে।
স্মার্টফোনে ইন্টারনেটযুক্ত যে কেউ এ ধরনের টিভি দেখতে পারবে। স্মার্টফোনে টিভি দেখার অ্যাপ বিনা খরচেই পাওয়া যায় অ্যাপ স্টোরগুলোতে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় অনেক দেশেই আইপিটিভি জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশের ইন্টারনেট পোর্টালগুলোও ইন্টারনেটভিত্তিক এই সম্প্রচার মাধ্যমটির প্রতি ঝুঁকছে। ১৯৯৫ সালে প্রথম আইপিটিভির ব্যবহার শুরু হয়। বাংলাদেশে রেডিয়েন্ট নামে একটি আইপিটিভি চলছে।
বিশেষ সুবিধা কী এই আইপি টিভিতে ?
ক্যাবল টিভি বা ডিসের লাইনে আমরা ইচ্ছেমতো চ্যানেল বদলাতে পারি মাত্র। এর বাইরে তেমন কোনো সুবিধা নেই। কিন্তু আইপি টিভির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা আপনি আপনার সময়মতো অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন।
যেমন একটি অনুষ্ঠান রাত ১০টায় প্রচারিত হবে। আপনি ওই সময় ব্যস্ত থাকবেন। কিন্তু অনুষ্ঠানটিও মিস করতে চান না। আইপি টিভি এই অনুষ্ঠান আপনি যখন দেখতে চান তখনই সম্প্রচার করবে। আইপি টিভি আপনার নির্দেশমতো ওই অনুষ্ঠান সয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড করে রাখবে এবং আপনার সময়ে প্রচার করবে।
এছাড়া বাজারে প্রতিযোগিতার ফলে ক্যাবল টিভি অপারেটরগুলোর ‘দৌরাত্ম্য’ কমবে। ছবির মান ভালো হবে যেমন এইচডি ও ফোরকে রেজ্যুলেশনে টিভি দেখা যাবে।
আর একটি ইন্টারনেট লাইনে আইএসপিদের কাছ হতে ভয়েস, ডাটা ও আইপি টিভির সেবা নেয়া যাবে। ফলে ট্রিপল প্লের বিভিন্ন প্যাকেজে গ্রাহকের খরচ বেশ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আইপি টিভি কী?
বাংলাদেশে এখন সবার বাসায় বাসায় যে ক্যাবল টিভি চলে সেখানে আমরা দেখি বাইরে হতে একটি গোল মোটা কালো একটি ক্যাবল বা তার এসে টিভির সঙ্গে প্লাগইন বা যুক্ত হয়েছে। একটু উন্নত ছবি ও বেশি চ্যানেলের জন্য এই ক্যাবল আবার একটা সেট-টপ বক্স হয়ে টিভির সঙ্গে যুক্ত হয়। সাধারণভাবে একে ডিসের লাইন বলা হয়ে থাকে।
একেকটি এলাকায় এই ডিসের লাইনের অপারেটর বা ক্যাবল অপারেটর থাকে। ক্যাবল অপারেটরের স্টেশনে বড় বড় ডিশ অ্যান্টেনা থাকে যেখান হতে স্যাটেলাইট থেকে ব্রডকাস্ট সিগন্যাল এসে ওই ক্যাবলের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি টিভিতে অডিও-ভিডিও সম্প্রচারিত হয়।
আইপি টিভি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল টিভি বা ইন্টারনেট টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এই সিগন্যাল ইন্টারনেট দিয়ে আসে, ব্যস। এর জন্য অ্যান্টেনার দরকার হয় না। মানে এখানে কোনো রেডিও সিগন্যালে অডিও-ভিডিও না এসে না ইন্টারনেটের মধ্য দিয়ে আসে। যেটি একসঙ্গে ইন্টারনেট হতে ডাউনলোড হয়ে স্ট্রিমিং বা সম্প্রচারিত হতে থাকে।
আইপিটিভির যত সেবা:
আইপি টিভি সেবার অন্যতম একটি হচ্ছে ভিডিও অন ডিম্যান্ড বা ভিওডি। নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স বা এমন ধরনের সেবা হচ্ছে ভিওডি। এতে মুভি, নাটক, টিভি সিরিয়ালসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্লে লিস্টে দেয়া থাকে। এখানে গ্রাহক যখন যেটা খুশি দেখে নিতে পারেন।
আরেক ধরনের আইপি টিভি সেবার মধ্যে রয়েছে এন্টারপ্রাইজ ক্যাবল টিভি চ্যানেলগুলো মানে মানে এই স্টার জলসা, স্টার স্পোটর্স, জিটিভি, ডিসকভারি, চ্যানেল একাত্তর ইত্যাদি চ্যানেল দেখানো।
সেবা নিতে যা লাগবে?
ডিসের ক্যাবলে যেভাবে টিভি দেখা যায় এখানেও বিষয়টি খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। আইপি টিভি অপারেটররা ক্যাবল অপারেটরদের মতোই সংযোগ দিয়ে যাবে। তবে এখানে ইন্টারনেট লাইনে বা ক্যাবলে আইপি টিভির সেবা পাওয়া যাবে।
এজন্য ৫ হতে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সংযোগ হলেই হবে। এতে এইচডি ছবিও নিরবিচ্ছিন্নভাবে দেখা যাবে। ইন্টারনেট টিভি বা স্মার্টটিভি হলে সরাসরিই ইন্টারনেট ক্যাবল টিভিতে সংযোগ হবে। আর স্মার্টটিভি না হলে একটি সেট-টপ বক্স নিতে হবে। এই সেট-টপ বক্স ইন্টারনেট হতে আসা অডিও-ভিডিওকে ডিকোড করবে এবং টিভিতে স্ট্রিমিংয়ে জন্য উপযুক্ত করবে। এই সেট-টপ বক্স আইপি টিভি অপারেটররা দিয়ে যাবে।
এছাড়া চাইলে কম্পিউটারে এই আইপি টিভি দেখতে পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে শুধু অপারেটরের সংযোগ থাকলেই হবে।
যেভাবে কাজ করে আইপিটিভি ?
আমাদের অনেকেরই মনে আছে এক সময় আমরা টিভি দেখতে বাড়ির ছাদে বা বাসার বাইরে উচু করে লম্বা মাছের কাটার মতো অ্যান্টেনা স্থাপন করতাম। এই অ্যান্টেনার সঙ্গে টিভির সংযোগ করা থাকতো একটি চ্যাপ্টা ক্যাবল বা তার দিয়ে। অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা দিকে রাখা হতো যা দিয়ে রেডিও সিগন্যাল এসে টিভিতে অডিও ও ভিডিও চলতো। এতে বিশেষ করে বিটিভি দেখা যেতো। পরে ডিসের মতো অ্যান্টেনা এলো। সেই সময়ে বেশ দামি এই অ্যান্টেনায় কিছু বিদেশী চ্যানেল দেখা যেতো। এটি এলাকায় দু’একটি বাড়িতে দেখা মিলতো।
টিভি স্টেশন হতে অনুষ্ঠান বেতার তরঙ্গে রূপান্তরিত করে অ্যান্টেনা দিয়ে বাতাসে ছেড়ে দেয়া হতো। আমাদের বাসার ছাদে থাকা অ্যান্টেনা সেটি ধরে তরঙ্গ হতে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যালে রূপান্তর করে টিভিতে দিয়ে দিতো। টিভি সেই সিগন্যালকে অডিও-ভিডিওতে রূপান্তর করে দেখাতো।
আইপি টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে একই সময় অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠানো হয়ে থাকে। আর অনুষ্ঠানে রেকর্ড করে রেখে বা চ্যানেলের পুরোনো অনুষ্ঠান দেখতে গেলে সেটি বেশ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার হতে দেখতে হয়। সার্ভারে অনুষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল ফরম্যাট সংরক্ষিত থাকে তা অনুষ্ঠান এনালগ রেকর্ড হলেও।
আইপি টিভি প্রথমে আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে সার্ভারের সাথে সংযোগ নেয়। এরপর সার্ভার সফটওয়্যার দিয়ে টিভিতে অডিও-ভিডিও পাঠায়। স্মার্টটিভিতে তা সরাসরি চলে। আর স্মার্টটিভি না হলে সেট-টপ বক্স লাগে । এই বক্স ইন্টারনেট থেকে আসা অডিও-ভিডিও ডেটা প্যাকেট গুলো নিয়ে তা ডিকোড করে টিভিতে চলার উপযুক্ত করে।