ক্লাউডের কথা সবাই জানি। মেঘ মাদুরের দেশ থেকে ডিজিটার দুনিয়ায়ও রয়েছে ক্লাউড। এই ক্লাউড মেঘের মতোই ছাতা হয়ে ধরা দিয়েছে ডিজিটাল জীবনে। হার্ডওয়্যার স্বল্পতার বা সক্ষমতার বাধা পেরিয়ে সব স্থান থেকেই নিজেরে প্রয়োজনীয় দস্তাবেজে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশের মতো দেশে ক্লাউডে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। ব্যবহার ও ব্যবসায় উভয় দিকেই।
লোড শেডিং বা অন্য কোন সমস্যায় আমাদের হার্ড-ড্রাইভ ফেইল করে, ফলে হঠাত করেই আমাদের হার্ড-ড্রাইভ বা লোকাল স্টোরজের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে পারে অনেক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যা হয়তো আর কখনোই ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না। তবে সেই ডকুমেন্টগুলো যদি লোকাল স্টোরেজের পাশাপাশি ক্লাউড স্টোরেজেও সংরক্ষণ করে রেখে থাকি তবে আমরা সহজেই সেই ডকুমেন্টগুলো ফিরে পাবো এমটাই জানিয়েছে ওপেনসোর্স ভিত্তিক কম্পিউটিং’র উপরে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণারত মোবারক হোসাইন।
বাংলাদেশে আইসিটি জার্নালিষ্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) ও প্লেক্সাস ক্লাউডের সহযোগীতায় সোমবার কাওরান বাজারে অবস্থিত সফটওয়্যার টেকনোলজী পার্কে দ্যা ফিউচার অব ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভবিষ্যৎ বিষয় নিয়ে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সময় মোবারক হোসাইন, ক্লাউড নিয়ে বিশদ আকারে ধারণা দেয়। ক্লাউডের সুবিধা কি কি, বাধা কোথায় এবং বাংলাদেশের গ্রাহক ক্লাউড ব্যবহার করে কি ভাবে উপকৃত হতে পারে এই সকল বিষয় তোলেন ধরা হয়।
ক্লাউড কি?
ক্লাউড মূলত ওয়েব সার্ভার। অর্থাৎ ওয়েব এ আপনাকে প্রয়োজনীয় জায়গা দেয়া হবে যেখানে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল বা ফোল্ডারগুলো রাখতে পারবেন। যেমন মাইক্রোসফট’র স্কাই ড্রাইভ কিংবা গুগল ড্রাইভ-এ আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল ফোল্ডার রাখতে পারেন। ক্লাউড সার্ভারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হোল এতে কাজ করার সময় আপনি হার্ডওয়ার রিসোর্স যোগ করতে পারেন, যেমন সি পি ইউ। এছাড়াও ক্লাউড এ থাকা ডাটা যেকোনো সময় অন্য কোন মেমোরি ডিভাইসে ট্রান্সফার করা যায়। আমরা স্কাই ড্রাইভ বা গুগল ড্রাইভ এ যে ওয়ার্ড, এক্সেল বা পাওয়ার পয়েন্টে কাজ করি সেগুলো কিন্তু ক্লাউড স্টোরেজে সেভ হয়। আপনার পিসির ফিসিকাল ড্রাইভে অফিস ইন্সটল করা না থাকলেও আপনি এই কাজ গুলো ক্লাউড সার্ভারের মাধ্যমে করতে পারবেন।
ক্লাউডের প্রকারভেদ:
৪ ধরনের ক্লাউড রয়েছে যেমন, পাবলিক ক্লাউড, কমিউনিটি ক্লাউড, প্রাইভেট ক্লাউড, হাইব্রিড ক্লাউড।
পাবলিক ক্লাউড: পাবলিক অ্যাপলিকেশন, স্টোরেজ ও অন্যান্য রিসোর্সসমুহ সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এই সেবা সাধারণত বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। যেমন: গুগল, অ্যামাজন।
কমিউনিটি ক্লাউড: সাধারণত কোনো বিশেষ শ্রেণীর জন্য যে কম্পিউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা করা হয় সেটি হবে কমিউনিটি ক্লাউড কম্পিউটিং। সাধারণত নিরাপত্তা ও আইনগত অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে এই ধরণের কম্পিউটিং করা হয় যা অভ্যন্তরীণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
প্রাইভেট ক্লাউড: যখনমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্লাউড সিস্টেম ডেভেলপ করা হয় তখন তাকে প্রাইভেট ক্লাউড কম্পিউটিং বলে। এটিস সাধারনত অভ্যন্তরীণভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হয়। এখানে প্রবেশের জন্য সিকিউরিটি কোড এর প্রয়োজন হয়।
হাইব্রিড ক্লাউড: দুই বা ততোধিক ক্লাউডের সমন্বয়ে গঠিত ক্লাউডকে হাইব্রিড ক্লাউড বলে। এর ফলে অধিক পরিমান রিসোর্স শেয়ার করা যায়।
ক্লাউডের সুবিধা:
অপারেটিং খরচ তুলনামুলক কম থাকে।
নিজস্ব হার্ডওয্যার বা সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয় না ফলে খরচ কম।
সার্বক্ষণিক ব্যবহার করা যায়।
যেকোনো স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আপলোড বা ডাউনলোড করা যায়।
তথ্য বকভাবে প্রসেস বা সংরক্ষিত হবে তা জানার প্রয়োজন হয় না।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যার আপডেট করা হয়ে থাকে।
যেকোনো ছোট বা বড় হার্ডওয়্যার-এর মধ্য দিয়ে অ্যাপলিকেশন ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।
সহজে কাজকর্ম মনিটরিং এর কাজ করা যায় ফলে বাজেট ও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করা যায়।
ক্লাউডের বাধা:
ডেটা, তথ্য অথবা প্রোগ্রাম বা অ্যাপলিকেশন এর উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
এটি দ্রুতগতি সম্পন্ন নয়।
আবহাওয়াজনিত কারণে বা ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হলে সার্ভিস বিঘ্নিত হয়।
ক্লাউড সাইটটিতে সমস্যা দেখা দিলে ব্যবহারকারীরা তার সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হন।
তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের এবং তথ্য পাল্টে যাওয়ার অর্থাৎ হ্যাকিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তথ্য ক্লাউডে পাঠিয়ে দেওয়ার পর তা কোথায় সংরক্ষণ হচ্ছে বা কিভাবে প্রসেস হচ্ছে তা ব্যবহারকারীদের জানার উপায় থাকে না।
বাংলাদেশে ক্লাউড সেবা:
ক্লাউডের ব্যবহার ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ক্ষুন্দ্র আকারের ডাটা সেন্টারের ব্যবহার কমে আসবে। ফলে গ্রাহকদের সফটওয়্যার খরচ কমে যাবে। মুক্ত অবকাঠামো হওয়ার কারণে বাজারে পাওয়া যায় েএমন সফটওয়্যার ব্যবহার করেই ক্লাউড অব কাঠমো তৈরি করা সম্ভব। কম্পিউটারের মেমরী, স্টোরেজ একত্রিত করে একটি ক্লাউড রিসোর্স তৈরি করা যায়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই কম্পিউটার বানানো সম্ভব। তাই বাংলাদেশের উপযুক্ত সময় রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী খাতে ওপেনসোর্স ভিত্তিক ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজস্ব ক্লাউড তৈরি করা। ২০২২ সালে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের বাজার হবে ৩৩১ বিলিয়ন ডলার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ খাতে আমাদেরও সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ আমাদের গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে আমাদের দেশে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেশের বাইরের ক্লাউডে রাখা হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন কেবলের সাথে যুক্ত হওয়ার পরে আমাদের নেটওয়ার্ক বহির্বিশ্বের সাথে যুক্ত হওয়ায় লেটেন্সি ৭০০ মিলি সেকেন্ড থেকে কমে ৩০০ মিলি সেকেন্ডে আসে। যদি আমরা নিজেদের দেশের ক্লাউডে আমাদের তথ্য সংরক্ষণ করি তাহলে এই লেটেন্সি ১০ থেকে ৫০ মিলিসেকেন্ডে নেমে আসবে। এতে করে আমাদের তথ্য ব্রাউজিংয়ের গুণগত মান উন্নত হবে এবং আমাদের ইন্টারনেট খরচ কমে আসবে।