ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপির মধ্যে আন্তলেনদেনের স্বাধীন ও সহজ সুযোগ এনে দিয়েছে ওয়েব ভিত্তিক ডিজিটাল প্লাটফর্ম ‘বিনিময়’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করে তা হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে। ফলে দেশের সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের তৈরি উদ্ভাবনী এই সেবার মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্ট দিয়ে বিকাশ থেকে রকেটে অথবা রকেট থেকে এমক্যাশ বা বিকাশে কিংবা ব্যাংকে তাৎক্ষণিক লেনদেন করা যাবে।
সোমবার থেকে ‘বিনিময়’ শুরু হওয়া এই প্লাটফর্মটির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক এই সেবা নিতে পারবেন। এমএফএস বা ব্যাংকের যেকোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে গ্রাহক বিকাশ, রকেট, উপায় কিংবা এমক্যাশে ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করতে পারবেন।
এজন্য গ্রাহক তার ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাপে ‘বিনিময়’ আইকন থেকে আইডি খুলতে পারবেন। ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সহজে ও দ্রুত লেনদেন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে শুধু অন্যের ভার্চ্যুয়াল আইডি দিলেই চলে যাবে টাকা। নাম, ব্যাংক বা অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়ারও প্রয়োজন হবে না। প্রাথমিকভাবে ছোট পরিসরে লেনদেনের সুযোগ মিলবে এই ব্যবস্থা থেকে।
শুরুতেই বিনিময় নামে ভিন্ন কোনো অ্যাপ তৈরি হচ্ছে না। বিনিময় একটি সেবা হিসেবে ব্যাংক, এমএফএসের অ্যাপে যুক্ত হবে। ফলে বিনিময় ব্যবহার করতে চাইলে গ্রাহককে নিবন্ধন করে নামের পরে @binimoy.gov.bd-এ যুক্ত হয়ে একটি আইডি তৈরি করতে হবে। নিবন্ধনের পর ‘সেন্ড মানি’ ও ‘রিসিভ মানি’ নামে দুটি অপশন দেখতে পাবেন গ্রাহক।
কাউকে টাকা পাঠাতে চাইলে সেন্ড মানি অপশনে গিয়ে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট আছে তা থেকে একটি বেছে নিতে হবে। এটা নির্ধারণের পর টাকা যাকে পাঠানো হবে তার মোবাইল ফোন নম্বর বা ইতিমধ্যে যদি ওই ব্যক্তির ‘বিনিময়’-এ আইডি থাকে, সেই আইডি নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানো যাবে।
যাকে টাকা পাঠানো হবে তিনি ‘রিসিভ মানি’ অপশনে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে থাকা যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নম্বরে টাকাটা গ্রহণ করতে পারবেন।
তবে আপাতত ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেন করতে পাচ্ছেন গ্রাহক। এর মধ্যে ৮টি ব্যাংক এবং বাকি তিনটি এমএফএস প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- সোনালী, ব্র্যাক, ইউসিবি, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, আল-আরাফাহ ইসলামী ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। আর এমএফএস প্রতিষ্ঠান হলো- বিকাশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেট ও ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ। এর বাইরে টালি পে নামের একটি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) যুক্ত হবে।
‘বিনিময়’-এ খরচ কত?
‘বিনিময়’ সেবার লেনদেনসহ অন্যান্য চার্জ ও ফি কত হবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে বেধে দেয়া ফি অনুযায়ী, ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি) ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে যে কোনো অংকের প্রতিটি লেনদেনে অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান প্ল্যাটফর্মকে অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংককে ৫০ পয়সা দেবে।
ব্যাংক ছাড়া অন্যদের ইন্টারঅপারেবল চার্জ দিতে হবে, যা অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। ইন্টারঅপারেবল ফি গ্রাহক থেকে নেয়া যাবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিনিময় প্লাটফর্ম থেকে ব্যাংক টু ব্যাংক যে কোনো অংকের লেনদেনে গ্রাহক থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা নেয়া যাবে।
ব্যাংক থেকে পিএসপি এবং এমএফএস লেনদেনে গ্রাহক থেকে কোনো চার্জ নেয়া যাবে না। তবে এমএফএস ও পিএসপির ক্ষেত্রে অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ হারে চার্জ দেবে।
আর এমএফএস ও পিএসপি থেকে ব্যাংক লেনদেনে গ্রাহক থেকে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ফি আদায় করা যাবে। এখানে কোনো ইন্টারঅপারেবল চার্জ লাগবে না।
তবে পিএসপি টু পিএসপি ও এমএফএস লেনদেনে গ্রাহক থেকে নেয়া যাবে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। এক্ষেত্রে ইন্টারঅপারেবল চার্জ হিসেবে অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ফি দেবে দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে।
অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে বিকাশ থেকে রকেটে লেনদেনে প্রতি হাজারে গ্রাহকের খরচ পড়বে পাঁচ টাকা। এই সেবার মাধ্যমে পিএসপি থেকে কোনো ব্যাংকে টাকা গেলে প্রতি হাজারে গ্রাহককে গুনতে হবে ১০ টাকা। পিএসপি থেকে পিএসপি ও এমএফএসে টাকা পাঠালে গ্রাহককে দিতে হবে প্রতি হাজারে পাঁচ টাকা। এ ক্ষেত্রে যে পিএসপি ও এমএফএসে টাকা যাবে, তাদের দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মাশুল দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা যাবে সেই প্রতিষ্ঠান এই মাশুল পাবে। একইভাবে এমএফএস থেকে ব্যাংকে টাকা গেলে প্রতি হাজারে গ্রাহককে দিতে হবে ১০ টাকা।