ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) বললে অনেকেই শুধুমাত্র গেমিংয়ের বিষয়টি ভাবেন। শুধু গেমিং নয়, এই প্রযুক্তি এখন ছড়িয়ে পড়ছে সবক্ষেত্রে। বলা হচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো ভবিষ্যৎ!
প্রায় এক দশক পরে একটি ভালো অবস্থানে এসেছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি। যদিও আমরা এটি সম্পর্কে খুব কমই লোকে ভালোভাবে জানি।
মাত্র কয়েক বছর আগে ভিআর এর গ্রাফিক্স, সাউন্ড কোয়ালটি খুব বেশি ভালো ছিলো না। এছাড়া ভিআর ওয়ার্ল্ডে বিচারণ করার তেমন সুযোগ ও কনটেন্ট ছিলো না। এখন এটি সত্যিই অসাধারণ অভিজ্ঞতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, এখন ভিআর প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এবং বড় কোম্পানিগুলো এই দিকে নজর দিচ্ছে।
গেমিংয়ের ক্ষেত্রে ভিআর
গেমিং খাতে আসার পর সত্যিই লাভজনক হিসেবে ধরা দিয়েছে ভিআর প্রযুক্তি। আর তাইতো এইচটিসি ভাইভ, অকুলাস রিফট, সনির প্লেস্টেশন ভিআর বাজারে বেশ ভালো করছে।
চরিত্রের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিয়ে সত্যিকারের গেমের জগতে প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা দিচ্ছে ভিআর। অসাধারণ গ্রাফিক্স, সাউন্ডের মাধ্যমে এ যেনো এক ভিন্ন জগৎতে প্রবেশ করেন ব্যবহারকারী বা গেমাররা।
এই প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা বিবেচনায় এখন গেমিং কোম্পানি ও ডেভেলপাররা পরবর্তী প্রজন্মের ভিআর অভিজ্ঞতা দিতে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী ভিআর গেমিংয়ের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে, যা প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে।
শিক্ষায় ভিআর
একজন শিক্ষক যদি শ্রেণিকক্ষে গুগল আর্থ বা ম্যাপস ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সামনে বিশ্বকে তুলে ধরে সেটি কতোই না মজার হয়। সেই কাজটি এখন শিক্ষার্থীরাই ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখতে পারে। ক্লাসে কিংবা ঘরে বসেই জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে পারে।
আগামীতে শ্রেণিকক্ষে এই প্রযুক্তির ব্যবহার সাধারণ বিষয় হয়ে যাবে এবং শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শহর, জাদুঘর, প্রকৃতি দর্শনীয় স্থানগুলো ভার্চুয়ালি দেখতে পারবে।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রাচীণ রোমকে এক্সপ্লোর করার সুযোগ পায়, যেখানে হাজার বছর আগে রোম কেমন ছিলো সেটি দেখানো হয়।
ফলে আপনি যেখানে যেতে পারবেন না তা এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই সহজে দেখে নিতে পারবেন।
চিকিৎসায় ভিআর
ভিআর মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে রোগীদের সহায়তা করা যায় সেই উপায় খুঁজছে।
অনেক সময় স্মৃতিভ্রষ্ট কিংবা মন খারাপ হলে একটি নির্দিষ্ট জায়গা তাদেরকে সুস্থ হতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ভিকটিমরা সেখানে না যেতে পারলেও ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে সে জায়গা দেখানো সম্ভব, যা তাদের সেরে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, শারিরিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও ভিআর সহায়তা করতে পারে। আর সেই কাজটিও করে চলেছে ভিআর।
বড়দের শিক্ষায় ভিআর
শুধু স্কুলে শেখা কিংবা চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহায়তা নয়, ভিআর চাকরির ক্ষেত্রে সফলতার জন্য বড়দের শিক্ষায়ও সহায়তা করতে পারে। ইতিমধ্যেই ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, সার্জনরা কীভাবে মেডিকেল অপারেশন করতে হয় তা ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখা শুরু করেছেন। ফলে প্লাস্টিক মডেল অথবা সত্যিকারের মানুষ ছাড়াই এখন তারা এসব অনুশীলন করতে পারছেন।
ভিআর সিম্যুলেটরের মাধ্যমে কম্পিউটারে বিভিন্ন অবস্থা বা অসুস্থতার রেপ্লিকেশন তৈরি করা যায় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অনেক কিছু শিখতে পারছেন।
একজন দন্তচিকিৎস কীভাবে দাঁতে ড্রিল করতে হয় সেটি ভিআর এর মাধ্যমে অনুশীলন করতে পারছেন।
ডাক্তারদের মতো প্রশিক্ষণার্থী পাইলটরাও ভিআর এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন। ফ্লাইট সিম্যুলেটর এর পরিবর্তে ভিআর এর মাধ্যমে কীভাবে প্লেন চালানো সম্ভব সেটি শেখা সহজ ও কম খরচে সম্ভব।
ডিবিটেক/বিএমটি