ফাইভজি লাইসেন্স গাইডলাইনের খসড়া প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এতে লাইসেন্স মূল্য ধরা হয়েছে বার্ষিক ১০ কোটি টাকা। লাইসেন্সের মেয়াদ থাকবে ৫০ বছর। আর লাইসেন্স প্রাপ্তির এক বছরের মধ্যেই বিভাগীয় পর্যায়ে চালু করতে হবে ৫জি সেবা।
একক এই লাইসেন্সটি ৫জি সেবাসহ টুজি, থ্রিজি, ৪জি১ এলটিই লাইসেন্সের অধীনে সমন্বিত করা হয়েছে। ছোট আকারের ব্যবসায় ক্ষেত্রে ফাইবার লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটিতে ফাইবার ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সুযোগ রয়েছে প্রয়োজন সাপেক্ষে ছোট মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের।
বলা হয়েছে, লাইসেন্সের মাধ্যমে আইওটি মতো নতুন প্রযুক্তির পূর্ণ ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন অপারেটররা। একইসঙ্গে বি২বি, এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), ক্লাউড কম্পিউটিং, এম২এম (মেশিন টু মেশিন কমিউনিকেশন) এবং ডাটা অ্যানালিটিক্স সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে এই লাইসেন্স নিতে হবে অপারেটরদেরকে। আর সেবাগ্রহিতার ডাটার পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে লাইসেন্স গ্রহণকারীকে।
প্রাথমিক ভাবে ২.৬ গিগাহার্জ এবং ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে বরাদ্দ দেয়া হবে ৫জি তরঙ্গ। অর্থাৎ দুই ব্যান্ড মিলিয়ে (৪০ ও ৪৫) ৮৫ গিগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫জি লাইসেন্সিংয়ে।
তবে ২.৬ গিগাহার্জে ইতোমধ্যেই ওলো এবং বাংলালায়নকে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়ায় এই ব্যান্ডকে পর্যপ্ত হিসেবে মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত লাইসেন্সিং গাইডলাইনে ক্লিন ও পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
‘টিডিডি ব্র্যান্ড’ হিসেবে ফাইভ জি চালু করতে ‘নতুন করে ইক্যুইপমেন্ট আনতে হবে’ উল্লেখ করে এক্ষেত্রে নীতিগত সুবিধা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে রবি’র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম মনে করছেন, ব্যবসায় সুযোগ সৃষ্টি করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ৫জি ইকো সিস্টেম ডেভলপ করতে সহায়ক বিষয় অন্তভূক্ত করেই এটি চূড়ান্ত করবেন। এক্ষত্রে ক্লিন ও পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম সাশ্রয়ী মূল্যে বরাদ্দ দিয়ে ৫জি মোবাইল বান্ডিলিং সুবিধা এবং ডিডব্লিউএম রাউটারের মতো ফাইভজি নেটওয়ার্ক ডিভাইস আমদানির সুযোগ করে দেবে। একইসঙ্গে নিজস্ব নেটওয়ার্কে ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের সুযোগও দাবি করেন তিনি।
অরপরদিকে ৫জি লাসেন্সিং নীতিমালায় অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান। তিনি বলেছেন, ফাইভজি হবে নিশ। ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন নীতিমালার সঙ্গে টেলিকম নীতিমালার সমন্বয় করা দরকার আছে। একইসঙ্গে ফাইবার নির্ভরতার বিষয়টি মাথায় রেখে এখানে আইএসপিদের সঙ্গে অংশীদারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাই তাড়াহুড়া না করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নীতিমালা থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া দরকার। প্রসঙ্গক্রমে টেলিকম ন্যাশনাল পলিসি ও অ্যাক্টের মধ্যে সমন্বয়ের কথাও বলেন তিনি। গুরুত্বারোপ করেন ফাইভজি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর।
অপরদিকে নতুন আইএসপি গাইডলাইন নীতিমালা অনুযায়ী বিটিএস টু বিটিএস ক্যাবল ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ায় এবার ৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এই সেবা দিতে তাদের অংশীদার করার দাবি আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারা মনে করছে, ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে শিল্পাঞ্চলসহ ব্যবসায় জোনে ৫জি সেবা দেয়া তাদের পক্ষেই বেশি সহজ হবে। কেননা ফাইভজি’র ব্যবসায় ক্ষেত্রটি উৎপাদনমুখী। ডেটা নির্ভর হলেও লাইসিন্সিং নীতিমালায় আইএসপি ও আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তরঙ্গ বরাদ্দে খসড়ায় কোনো ক্লজ উল্লেখ না থাকাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন আইএসপিএবি পরিচালক নাজমুল করিম ভূঁইয়া।
আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই লাইসেন্সিং গাইড লাইনের ওপর মতামত দেয়ার সুযোগ রেখেছে বিটিআরসি। সেখানেই এ ধরনের প্রস্তাবনা দিতে এখন হোম ওয়ার্ক করছেন আইএসপি ও অপারেটররা।