এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে?
ঘরেতে অভাব, পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
রানার কবিতার মতোই লকডউনের সময়েও ‘প্রাণভোমরা‘ হয়ে দেশের শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যাওয়াদের কথা যেনো আড়ালেই থাকছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও যে বীরেরা দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে ঘরবন্দি মানুষকে ঘরে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে, তারাই আজ ধুঁকে ধুঁকে চলছে। ঠিক ‘রানার’ এর মতোই সবার খবর রাখার সুযোগ করে দিলেও তাদের খবর নেয়ার যেনো কেউ নেই।
সেবা দিয়ে এখন নিভু নিভু প্রদীপের মতো জ্বলছে ইন্টারনেট সেবাদাতারা। আর্থিক চাপের মুখে আগামী মে মাস শেষ হওয়ার আগেই নিভে যাওয়া উপক্রম হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ সেবাদাতার।
এ বিষয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা সংগঠন আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন,
শতপ্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বিল না পাওয়া। তাই আমরা গ্রাহকদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি আমাদের বিল পরিশোধ করার জন্য।
একইভাবে আইএসপিএবি সহ-সভাপতি এবং আইআইজিবি মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বললেন,
ডেটাবেজ বিল আমরা করি না। তাই বেশি বা কম ব্যাবহারে আমাদের রেভিনিউয়ের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। (আমাদের ভেল্যুচেনটা পোস্ট পেইড এবং সাধারণত শেষ সপ্তাহে বিল পরিশোধ হয়। লকডানের কারণে মার্চে হিউজ ইউজ হলেও বিল পাওয়া যায়নি। এপ্রিলেও একই অবস্থা। কালেকশন হয়নি। ফলে অনেক আইএসপি আইআইজি শাট ডাউন হয়ে যেতে পারে। আর তাই ব্যবসাটা বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাদেরকে সরকার যেন আইটিএস সেবার অন্তর্ভূক্ত করে এবং মূসক ও কর অব্যাহতি দেবে।
অপরদিকে অগ্নি সিস্টেমস এর পরিচালক জিয়া শামসি বলেন,
এই মুহূর্তে যারা করোনার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তাদের জন্য সাপোর্ট করা খুব কষ্ট হয়ে যাবে। সমস্ত আইএসপি’রিই হবে। আগামী মাস নাগাদ একটা বড় অংশ আইএসপি বন্ধ হয় যাওয়ার উপক্রম হবে।
বাংলানেট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জোবায়ের আলমাহমুদ হোসাইন বলেন,
সরকার যেহেতু ইন্টারনেটকে জরুরী সেবা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এজন্য আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইন্টারনেট সেবাকে সচল রাখার চেষ্টা করছি অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে।
তিনি আরো বলেন,
আমাদের আইআইজি লেভেল, আপস্ট্রিম লেভেলে যে রেভিনিউ শেয়ার রয়েছে বিটিআরসির সঙ্গে, সেই রেভিনিউ শেয়ারটাও বড় একটা অংশ যেটা সরাসরি আমাদে পারচেস প্রাইসের সঙ্গে ইমপ্যাক্ট করে। এক্ষেত্রে যদি ছাড় দেয়া হয় তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
জেডএক্স অনলাইন লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম জুলফিকার হায়দার বলেন,
করোনা উত্তর পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই সেবাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আগামী ৫ বছরের জন্য ভ্যাট শুন্য শতাংশে নামিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের ‘বীর’ এর মর্যাদা দিয়ে তাদের প্রতি সুদৃষ্টি না দেয়া হলে সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও যারা সেবা অব্যাহত রেখেছেন তারাও ঝড়ে পড়বেন। এর ফলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়লে লংকডাউনে সচল বাংলাদেশও ভেঙে পড়বে। আর এমনটাই যদি ঘটে তবে শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পই নয়, ভেস্তে যেতে পারে কারোনা যুদ্ধের সকল আয়োজন।