কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে সিগমাইন্ড অন্যতম। অফিসিয়ালি পথচলা শুরু ২০১৮ থেকে কিছু স্বপ্নবাজ তরুণের স্বপ্ন পূরনের লক্ষে। মূলত এ আই ভিত্তিক সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কম্পিউটার ভিশন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে ড্রাইভিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ও মনিটরিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তারা তৈরি করেছেন ওয়াচক্যাম নামের সফটওয়্যারটি। এটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।
সিগমাইন্ডের ভেহিকেল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এর মধ্যে চমকপ্রদ অসংখ্য ফিচার রয়েছে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, হাইওয়েতে গাড়ির প্রকৃতি ও সংখ্যা গণনা, লেন ভায়োলেশন সনাক্তকরণ, গাড়ির গতি নির্ধারণ, নম্বর প্লেট ক্যাপচারসহ স্মার্ট সিগন্যাল টাইমিং ম্যানেজমেন্টে করতে পারে। এছাড়া টোল প্লাজাতে স্থাপন করলে বাংলাদেশের ১০ রকম যানবাহন আলাদাভাবে সনাক্ত করে দ্রুততম সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় করতে পারে।
তাদের ফেইস রিকগনিশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে গোয়েন্দা নজরদারি, অফিসে কর্মচারী হাজিরা পর্যবেক্ষণ, যে কোনো বয়সের মানুষের মুখমণ্ডল শনাক্ত করা, সিসি ক্যামেরার নির্দিষ্ট আওতার মধ্যে কোন কোন সময় কোন ব্যক্তি এসেছিল, তা-ও জানা যায়। মুখোশ পরা কোনো ব্যক্তিকে যদি ক্যামেরার আওতায় দেখা যায়, তাহলে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে। পুরো ভিডিওতে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজতে চাইলে তাও সহজে বের করা যায়।
আরেকটি চমকপ্রদ সফটয়্যার হলো অবজেক্ট ডিটেকশন সিস্টেম। এটি নির্দিষ্ট কিছু ধরনের বস্তুকে শনাক্ত করতে সক্ষম।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে এসব সফটওয়্যার নিয়ে গবেষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর সফটওয়্যার উন্নয়ন করে পরীক্ষামূলক চালিয়েছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি স্থানে তাঁদের এ ফেইস রিকগনিশন সফটয়্যার এবং ভেহিকেল ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০১৬ সালে কানেক্টিং স্টার্টআপের মাধ্যমে উদ্যোগ কোম্পানি হিসেবে সিগমাইন্ড সামনে আসে। এর পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো এনভিডিয়া ইনসেপশন প্রোগ্রামের মেম্বারশিপ লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালেই সরকারের স্টার্টআপ বাংলাদেশ প্লাটফর্মে সেরা ২০ স্টার্টআপের মধ্যে জায়গা করে নেয় তারা। একই বছর বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডে অংশ নেয় এবং অ্যাপিকটায় অংশ নেয়। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত স্টার্টআপ ভিলেজে বাংলাদেশ থেকে সিগমাইন্ড অংশ নেয়।২০১৮ সালেই ভারতের মহারাষ্ট্রের একটি হাইওয়েতে সিগমাইন্ড ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু করে। ২০১৯ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত স্টার্টআপ ইস্তাম্বুল প্রতিযোগিতায় সেরা দশে জায়গা লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি।সর্বশেষ আন্তর্জাতিক এন্টারপ্রেনারশিপ ওয়ার্ল্ড কাপে বাংলাদেশ রাউন্ডে শীর্ষস্থানে থেকেছিল তারা যার ফাইনাল পর্ব ২০১৯ এর নভেম্বরে রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে শীর্ষস্থান লাভ করে তারা। ২০২০ সালে বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড লাভ করে তারা।
বিশ্বের সর্বাত্নক জনপ্রিয় স্টার্টআপ কম্পিটিশন গুলোর মধ্যে একটি হলো কে স্টার্টআপ (K-Startups) যা কোরিয়ান সরকার, কোরিয়ান স্টার্টআপ মন্ত্রনালয় এবং এসএমই মন্ত্রনালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর আয়োজিত হয় যেখানে সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করে। নিজ নিজ দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই শেষে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে মূল রাউন্ডে চান্স পেয়েছে সিগমাইন্ড । সারা বিশ্ব থেকে বাছাই করে ৬০ টি দলকে কোরিয়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৩ মাসের জন্যে যেখানে থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা এবং কোম্পানি গুলোর নিজ নিজ সিস্টেম উপস্থাপনের মাধ্যমে র্যাংকিং করা হয়ে থাকে । এছাড়াও কোরিয়ার সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে যোগাযোগের ব্যাবস্থাও করা হয়ে থাকে।
কে স্টার্টআপে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে সিগমাইন্ডের প্রতিনিধি হিসেবে কোরিয়া আছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক তানভীর তাবাসসুম অভি এবং চিফ ইনফরমেশন অফিসার মহসিনুল বারী সাকির। তারা সেখানে সিগমাইন্ডের প্রযুক্তি সমূহ এবং তাদের ব্যবহারিক প্রয়োগ প্রদর্শন করছেন এবং কোরিয়ায় কোম্পানি গুলো কিভাবে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যৌথ ভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
তানভীর এবং সাকির সম্প্রতি সিগমাইন্ডের হয়ে পার্কিং ক্লাউড (iparking) নামে কোরিয়ার বৃহৎ এবং সুপরিচিত একটি প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানির সাথে সমঝোতা চুক্তি (MOU) সাক্ষর করেছেন। সিগমাইন্ড এবং পার্কিং ক্লাউড যৌথভাবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক পার্কিং ম্যানেজমেন্ট সলিউশন নিয়ে কাজ করবে এবং বিশ্বমার্কেটে নিজেদের সলিউশন প্রতিষ্ঠা করার চেস্টা করবে। পার্কিং ক্লাউড কোম্পানিটি স্টারবাকস, ইমার্ট সহ কোরিয়ার সরকারি এবং বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত।
তানভীর এবং সাকির কোরিয়াতে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অবস্থান করবেন এবং ব্যাবসার প্রয়োজনে তা আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে।