কম্পিউটারে সর্বোচ্চ ছাড় দিলেও পাইকেরি-খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ে চাপের মুখে পড়বে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীরা। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে দেশের সবচেয়ে বড় কম্পিউটার হাব মাল্টিপ্লান সেন্টার, এলিফেন্ট রোড কম্পিউটার মার্কেটসহ এশিয়ার বৃহত্তম প্রযুক্তি পণ্যের বাজার আইডিবি মার্কেটে ঘুঘু চড়লেও চড়তে পারে। স্তিমিত হয়ে যেতে পারে প্রযুক্তি বাজারের প্রাণচাঞ্চল্য।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলাপকালে ডিজিবাংলা নির্বাহী সম্পাদকের কাছে এমন হতাশার কথা জানালেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) পরিচালক এ ইউ খান জুয়েল।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বার্ষিক ৩ কোটি টাকা টার্নওভারের ওপর ৪ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স আরোপের ফলে আমরা যারা খুচরা পর্যায়ে ব্যবসা করি তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো। কেননা কম্পিউটার পণ্যের দাম অংকে বেশি হলেও মুনাফার অংকটা কিন্তু সীমিত। প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে লাভের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই লোকসান গুণতে হয়।
জুয়েল বলেন, কম্পিউটার খাতে সরকার সর্বোচ্চ ছাড় দিলেও প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানী পর্যায়ে ৫ শতাংশ আগাম কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা সব আমদানীকারককেই দিতে হয়। অনেকেই না বুঝে এই করকে নিয়ে কথা বলছেন। অথচ এই করের চেয়ে মারাত্মক সমস্যা রয়েছে বাজেটে। সেটা হচ্ছে টার্নওভার কর। বাজেটে টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি এবং ট্যাক্সের হার ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটা খুচরা ও পাইকেরি ব্যবসায়ীদের দারুণ চাপে ফেলবে।
তিনি বলেন, এই কর বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতিতে ফেলবে। কেননা প্রযুক্তি পণ্যের অংকের হিসেবে একক মূল্যই কিন্তু বেশি। ভলিউমের দিক দিয়ে দৈনিক বেচা-কেনাও বেশি। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের করের আওতায় আনার মাধ্যমে আমাদের সবাইকে ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স দিতে হবে। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায় ৪ শতাংশ মুনাফা করা যায় না।
তাই ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৮০ লাখ টাকা, টার্নওভারের সীমা ৫ কোটি টাকা এবং টার্নওভার ট্যাক্স ১ শতাংশ নির্ধারণ করলে ব্যবসায়ীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর দিতে এগিয়ে আসবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, টার্নওভার ট্যাক্স ৪ শতাংশ অনেক বেশি। এটি কমিয়ে ১ শতাংশ করতে হবে। ৪ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স হলে ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবেন না। মাল্টিপ্লান, এলিফেন্ট রোড এবং আইডিবি’র মতো মার্কেট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কয়েক বছর পর সেখানে ঘুঘু চড়লেও বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।
ব্যক্তিগত ভাবে দুই যুগের বেশি সময় ধরে কম্পিউটার ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত কম্পিউটার সোর্স পরিচালক এ ইউ খান জুয়েল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে আমরা যখন আমদানী কমিয়ে উৎপাদনমুখী হতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছি তখন টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা কমিয়ে এমন একটি চাপের মুখে আমাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে যে আমাদের এখন বাজারে সাস্টেইন করাটাই চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
দেশের কম্পিউটার বাজারে সেলিং পাওয়ার খ্যাত এই কম্পিউটার ব্যবসায়ী আরো বলেন, একটি কম্পিউটারের দাম যদি কমপক্ষে ২৪ হাজার টাকাও হয় তখন ৩ কোটি টাকা টার্নওভার হতে কিন্তু খুব একটা সময় লাগে না। তবে এই ২৪ হাজার টাকায় কিন্তু লাভ হয় খুবই সীমিত। এর ওপর অনলাইনে যখন প্রযুক্তি পণ্যের কপি পণ্যগুলো যখন অবিশ্বাস্য কম মূল্যে বিক্রির অফার দেয়া হয়, তখন আমরা আরো বিপদে পড়ে যাই। আমরা পণ্য বিক্রি করলে তার সেবা দেই। প্রযুক্তি পণ্যটি কেনার আগেই এটি টাচ অ্যান্ড ফিলের ব্যবস্থা রাখি। প্রযুক্তি পণ্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নেই। এরপর যখন শর্ষের মধ্যে ভূত চলে আসে তখন আর ব্যবসায়ের পরিবেশ থাকে না। এর ফলে কিন্তু অনেক ডাকসাইটে কোম্পানি ইতিমধ্যিই ব্যবসায় গুটিয়ে নিয়েছে। কারো কারো নিভু-নিভু প্রদীপের মতো অবস্থা।