২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অনলাইন শপিংয়ের জন্যে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাবটি এই খাতের জন্য অশনি সঙ্কেত হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এটি যেনো গত অর্থবছরের মতো ‘ছাপাজনিত ভুল’ হয় তেমনটাই প্রত্যাশা তাদের । ই-কমার্স ব্যবসায়কে সোশ্যাল মিডিয়া ও সোশ্যাল বিজনেসের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলায় এই বিভ্রাট ঘটেছে। গত বছরের মতো বাজেট পাশ হওয়ার আগেই এটা সংশোধিত হওয়ারও আশা করছেন তারা।
প্রসঙ্গত, এক বছর আগে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে তা ‘ভুলবশত ছাপা হয়েছে’ বলে আবার তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে এবার সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভার্চুয়াল বিজনেসের জন্যে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর আলাদা ব্যাখ্যা দিলে তাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভার্চুয়াল বিজনেসের বাইরে রাখা হলেও এবার এসআর ০৭৯ এ সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল বিজনেস ক্যাটাগরিতে ‘ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরকে বুঝাবে’ যুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল ডিজিবাংলাকে বলেন, প্রথমে এটাকে গত বছরের মতো মুদ্রণ ত্রুটি বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য না আসায় আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে জানিয়েছি, এখানে মিস কমিউনিকেশন করা হয়েছে। ফেসবুক-ইউটিউব বা অনলাইনে বিজ্ঞাপন আর ই-কমার্স তো এক জিনিস না। তাই এটিকে স্বতন্ত্র একটি ক্যাটাগরি হিসেবে বিবেচনা করে ব্যবসায় বাণিজ্যের ডিজিটাল রূপান্তরের পথকে প্রশস্ত হবার সুযোগ করে দেয়ার। তারা বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
তমাল বলেন, রাইড শেয়ারের ওপর কর ১৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হলেও ই-কমার্স খাতের সাড়ে ৭ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এই বাজেট পাশ হলে নতুন এই খাতটি ধসে যাবে।
ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি আসিফ আহনাফ বলেন, ই-কমার্স এবং সোশ্যাল মিডিয়া’ উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে হাজারো তরুণ উদ্যোক্তার স্বপ্ন। উদ্যোক্তা উন্নয়ন এর জন্য আলাদা অনুদান অবশ্যই ডিজিটাল বাংলাদেশের বাজেট নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী করেছিল।
তিনি বলেন, গত বাজেটে অনলাইন সেল এর জন্য আলাদা সার্ভিস কোড ৯৯.৫ ছিল যা ভ্যাটের আওতামুক্ত ছিল। কিন্তু এ বছর নতুন ব্যবস্থাপনায় এই সার্ভিসটি বাতিল করা হয়েছে। ফলে এটি ৭৯.০ সার্ভিস কোড (সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল বিজনেস) এর অন্তর্ভুক্ত হলো, যার উপরে ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ই-কমার্স সেক্টরের জন্য হতাশাজনক। এবং ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার ভ্যাট মুক্তি সম্ভাবনাময় এই সেক্টরের জন্য কখনোই পর্যাপ্ত নয়। তাই আমি এ দাবী জানাচ্ছি ই কমার্স কে অন্য কোন সেক্টরের অধীন ( আইটি সার্ভিস বা ভার্চুয়াল সার্ভিস) এর অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদা ” ই-কমার্স” হিসেবেই বিবেচনা করা হোক এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই সেক্টরেকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হোক।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতি ও অনলাইন শপ আজকের ডিলের প্রতিষ্ঠাতা সিইও একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, ই-কমার্সের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ কর আরোপ আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। এর ফলে ছোট ছোট হাজার উদ্যোক্তার ওপর প্রভাব পড়বে। দেশী ই-কমার্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি। নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় বন্ধ হবে। ফলে এই পদক্ষেপ সরকার ঘোষিত ডিজিটালাইজেশন প্রতিশ্রুতির বিপক্ষে যাবে।
তিনি বলেন, এর ফলে অনলাইনে কেনাকাটা বিলাসী হয়ে উঠবে। শপিং মলের দোকানগুলো যেখানে অনেকটাই ভ্যাটের বাইরে থাকে সেখানে ডিজিটাল কেনাকাটার ওপর এমন ভ্যাট মানুষকে ডিজিটালি কেনাকাটা করতে নিরুৎসাহিত করবে।
বর্তমানে প্রায় এক হাজার ই-কমার্স কোম্পানি দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে এবং তাদের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, বাজেটে ই-কমাস ও ভার্চুয়াল ব্যবসায় সাড়ে ৭% ভ্যাট আরোপ করায় সাধারণ ক্রেতারা অনলাইন কেনাকাটায় উৎসাহি হবেন না। এটা ব্যবসায়ের ডিজিটাল রূপান্তরে অন্তরায় হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্ষেত্রে করভার ১৫% থেকে সাড়ে ৭% নামিয়ে নিয়ে আসা এবং স্টার্টআপ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানান তিনি। এই উদ্যোগকে তিনি ‘মন্দের ভালো’ উল্লেখ করে একই সঙ্গে এই বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যায়ের ক্ষেত্রে যেন প্রযুক্তি উদ্যোগগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি জানান আলমাস কবির। পরামর্শ দেন, ইএফফান্ডের মতো ব্যবস্থাপনায় এই অর্থ ব্যায়ের।