আনুষ্ঠানিকভাবে আইটিউনের যুগের ইতি ঘটলেও মিউজিক অ্যাপ থেকেই আইটিউনের মাধ্যমে গান ডাউনলোড করতে পারবেন ব্যবহারাকীরা। অন্যদিকে আইটিউনকে ভেঙে ম্যাকওএসের জন্যে আলাদা তিনটি অ্যাপ আনছে অ্যাপল। এগুলো হলো মিউজিক, টিভি ও পডকাস্ট অ্যাপ।
নতুন ম্যাকওএস ১০.১৫. সংস্করণে অ্যাপগুলো পাওয়া যাবে বলে বার্ষিক ডেভেলপার কনফারেন্সে জানিয়েছেন অ্যাপলের এক্সিকিউটিভ ক্রাইগ ফেদেরিগি।
অবশ্য এক বছর আগে থেকেই আইটিউনের বিকল্প হিসেবে আইফোন ও আইপ্যাডে মিউজিক, টিভি ও পডকাস্ট নামে আলাদা তিনটি অ্যাপ আনে অ্যাপল। তিনটি অ্যাপই আইটিউনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এর মধ্যে অ্যাপল মিউজিকে নিজের পছন্দমতো গান শোনা, পডকাস্ট অ্যাপ দিয়ে প্রয়োজনীয় ভিডিও সার্চ করা এবং টিভি অ্যাপের মাধ্যমে টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো দেখার সুবিধা রয়েছে।
কী এই আইটিউনস?
অ্যাপলের একটি মিউজিক সফটওয়্যারের নাম আইটিউনস। ২০০১ সালে আমেরিকায় মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি যে ভয়ঙ্কর রকমের পাইরেসির সম্মুখীন হয়েছিল, তার সমাধান সূত্র এনে দিয়েছিল আইটিউনস। এই অ্যাপটির মাধ্যমে এক ছাদের তলায় চলে এসেছিল গান-সিনেমা-টিভি। যার যেমন ইচ্ছে, সেইমতো সাবস্ক্রাইব করলেই পছন্দসই বিষয়টি চলে আসত মুঠোফোনে। আইটিউনস একমাত্র অ্যাপ যা সেই সময় মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে পাইরেসির হাত থেকে শুধু রক্ষাই করেনি, ইন্ডাস্ট্রির বিকাশেও সাহায্য করেছিল। রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা ২০১৮ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির আয় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপের দৌলতে।
কেন বন্ধ হচ্ছে অ্যাপটি?
মনে করা হচ্ছে, টেক দুনিয়ায় বাকি মিউজিক অ্যাপের সঙ্গে টেক্কা দিতে না পেরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাপল সংস্থা। কয়েক বছর ধরেই ডিজিট্যাল বাজারে আইটিউনসের মতো অনেক ‘মিউজিক’ অ্যাপ এসেছে, এমনকি অ্যাপলের নিজস্ব ‘অ্যাপল মিউজিক’ এর কারণেও বাজারে ধীরে ধীরে নিজের অস্তিত্ব হারাচ্ছিল আইটিউনস। কিন্তু এত বছর ধরে লাভের মুখ দেখা এই অ্যাপটিকে কেন বন্ধ করে দিচ্ছেন অ্যাপেল কর্তৃপক্ষ? তার একটাই কারণ। এবার থেকে এক ছাদের তোলায় নয়, আলাদা আলাদা ভাবে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া যাবে বিনোদন।
যেমন গানের সম্ভার থাকবে অ্যাপল মিউজিক অ্যাপে, টিভি দেখতে পাওয়া যাবে অ্যাপল টিভিতে, এবং থাকছে অ্যাপেল পডকাস্ট। ইতিমধ্যেই অ্যাপলের আইফোন এবং আইপ্যাডে এই পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে, যেখানে এই তিনটি ভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করা যাবে। ভবিষ্যতে ম্যাকবুকেও এই সুবিধা আনার ভাবনা রেখেছে সংস্থা। তবে বদলাচ্ছে না আইটিউনসের ‘কী ফিচার’। অর্থাৎ আইটিউনসে কেনা সমস্ত প্রোডাক্ট সিঙ্ক্রোনাইজ হয়ে চলে আসবে নতুন তিনটি অ্যাপে। তবে কথাই আছে, ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’, তাই সব সুবিধা পেলেও যেটা পাবেন না, তা হল আইটিউনসের নস্ট্যালজিয়া।
অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জোবস একবার বলেছিলেন, “অ্যাপল সেটাই করেছে যেটায় অ্যাপল সেরা – জটিল অ্যাপ্লিকেশনকে সহজ করে আরও কার্যকর করে তুলেছে। আইটিউনস অন্যসব অ্যাপের চেয়ে অনেক মাইল দূরে এগিয়ে। এটির সহজ ইন্টারফেস ব্যবহারকারীদের আরও আকৃষ্ট করবে এবং ডিজিট্যাল মিউজিকে বিপ্লব নিয়ে আসবে।”
আইটিউনসের জমানা শেষ হওয়া মানে একটি যুগের অবসান। তবে অ্যাপল কীভাবে আইটিউনসের ফিচারকে কাজে লাগিয়ে তাদের বাকি অ্যাপের উন্নতি করতে পারে, সেদিকে তাকিয়ে বিশ্বের অ্যাপল প্রেমীরা।