ক্রিকেট বা রাগবি’র পর দেরিতে হলেও ফুটবলেও প্রযুক্তি আসতে শুরু করেছে। প্রথম গোললাইন প্রযুক্তি । এরপর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভি এ আর। গত বছর থেকে ফুটবল খেলায় এই বড় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে দুটি টুর্নামেন্টের খেলায়
প্রথমবারের মতো প্রয়োগ হয়েছে ভিএআর বা ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারি।
ঐতিহ্যবাহী ইংলিশ ফুটবল প্রতিযোগিতা এফএ কাপে ব্রাইটন এবং ক্রিস্টাল প্যালেসের মধ্যে একটি খেলায় ব্যবহৃত হয়েছে ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভি এ আর। এটিই হচ্ছে ইংল্যান্ডের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক খেলা যেখানে ভি এ আর ব্যবহৃত হয়।
এ ছাড়া চেলসি আর আর্সেনালের মধ্যেকার কারাবাও কাপের খেলাতেও ভিএআর ব্যবহৃত হয়েছে ।
এই খেলায় একেবারে শেষদিকে একটি গোল করেন ব্রাইটনের গ্লেন মারে – যাতে বলটি তার হাতে লেগেছিল বলে সংশয় প্রকাশ করেন বিপক্ষের খেলোয়াড়রা।
ভিএআর প্রযুক্তির ফলে রাশিয়া বিশ্বকাপে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছিল- রিভিউ, অর্থ্যাৎ খেলা চলাকালীন সময়ে মাঠে কোন প্রকার কনফিউশন দেখা দিলে ‘রিভিউ’ এর আবেদন করা হয় এবং রিভিউ অনুযায়ী রেফারি সিদ্ধান্ত নেন। এই রিভিউ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি কাজ করছে একটি বিশেষ প্রযুক্তি যার নাম “Video Assistant Referee (VAR)” । এই রিভিউ এর বদলতেই বিশ্বকাপে অনেকগুলো ঘটনা ঘটতে গিয়েও ঘটেনি, আবার অনেক ঘটনা রেফারি দেখতে না পেলেও ঠিকই পরবর্তীতে রিভিউ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ব্যবহার শুরু হয়েছে পেশাদার ফুটবল লীগেও।
VAR আসলে কীভাবে কাজ করছে?
খেলার মাঠে ব্যবহৃত ৩৩ টি ব্রডকাস্ট ক্যামেরার সমন্বয়ে এই ‘VAR’ টিম কাজ করে। এই ভিএআর টিম পরিচালনার জন্য ১৩ জন রেফারি রয়েছেন যারা এই ৩৩ টি ক্যামেরার এক্সেস পেয়ে থাকেন। এবং আরও দুইটি বিশেষ ক্যামেরা রয়েছে যা শুধু অফসাইড নির্ধারণের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
উল্লেখ্য যে, ভিএআর টেকনোলজি নিজে কোন সিদ্ধান্ত নেয় না, এটির পরিচালনায় নিয়োজিত রেফারিরা ক্যামেরার ভিডিওগুলো দেখে পর্যালোচনা করে মাঠে থাকা রেফারিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকেন।
মাঠের বেশ কয়েকটি স্থানে বসানো রয়েছে ভিএআর ডিসপ্লে মনিটর যার মাধ্যমে কোন প্রকার রিভিউ এর আবেদন আসলে রেফারি ভিএআর কন্ট্রোলরুমের সাথে যোগাযোগ করে সেই ডিসপ্লে মনিটরের মাধ্যমে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত নেন।
VAR(ভিএআর) কী কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
মূলতঃ চারটি বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ভিএআর টেকনোলজি কাজ করছে।
১. গোল হওয়া কিংবা না হওয়ার সিদ্ধান্ত , অনেক সময় অফসাইড থাকা অবস্থায় গোল হয় কিংবা বলটি সত্যিকার অর্থে গোলপোস্টে ঢুকলো কি না সেটা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি কাজ করে। গোলপোস্টের পেছনে একাধিক ক্যামেরা লাগানো রয়েছে যেগুলো প্রয়োজনে সুপার স্লো-মোশনে রিপ্লাই করে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।
২.পেনাল্টি এর সিদ্ধান্ত কিংবা প্রতিপক্ষ আবেদন করলে তা খতিয়ে দেখা হয়। অনেক সময় গোলপোস্ট-বক্স এর মধ্যে হ্যান্ডবল, ফাউল হয়ে থাকে এবং রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিলে সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ রিভিউ এর আবেদন করতে পারে।
৩. বড় ধরণের কোন অঘটন ঘটলে সরাসরি লাল কার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত ।
৪. এবং মাঠের রেফারি কিছু মিস করলে তাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা।
অ্যাসিস্টেন্ট ভিএআর:
ভিএআর টেকনোলজি এর আবার রয়েছে আরও তিন অ্যাসিস্টেন্ট- যাদেরকে বলা হয় অ্যাসিস্টেন্ট ভিএআর-১ (AVAR1) , অ্যাসিস্টেন্ট ভিএআর-২ (AVAR2) এবং অ্যাসিস্টেন্ট ভিএআর-৩ (AVAR3) । এই তিনজনও কোন মানুষ নয় এরাও কয়েকটি ক্যামেরার সমন্বয়ে তৈরি যন্ত্রমানব মাত্র।
অ্যাসিস্টেন্ট ভিএআর-১ মূল ক্যামেরায় নজর রাখে ও ভিএআর কে তথ্য দিতে থাকে এবং কোন প্রকার রিভিউ কিংবা অঘটন ঘটলে তা পর্যালোচনার জন্য ভিএআরকে তথ্য দেয়।
অ্যাসিস্টেন্ট ভিএআর-২ নজর রাখে অফসাইড নির্ধারণের ক্ষেত্রে। এই কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরাটি শুধু অফসাইড বরাবর বসানো রয়েছে এবং অফসাইড সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে ভিএআরকে সহযোগিতা করে।
অ্যাসিস্টেন্ট ভিএআর-৩: মূলত টিভি প্রোগ্রাম ফিডের দিকে নজর রাখে এবং অ্যাসিস্টেন্ট ভিএআর২ এবং প্রধান ভিএআর এর মধ্যে যোগাযোগ নিশ্চিত করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
ভার্চুয়াল অফসাইড লাইন প্রযুক্তি
অফসাইড নির্ধারনের জন্য ভার্চুয়াল অফসাইড লাইন নামক আরও একটি বিশেষ টেকনোলজি কাজ করে এই ভিএআর টেকনোলজির সাথে। এবারের বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচে অফসাইড নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই টেকনোলজির ব্যাপক পারদির্শিতাও লক্ষ করা গেছে। এই ভার্চুয়াল অফসাইড লাইন একটি বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে যা মাঠের অফসাইড লাইনকে ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তির মাধ্যমে সফটওয়্যারে নিয়ে আসে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। এবং মাঠের অফসাইড লাইন বরাবর দুটি বিশেষ ক্যামেরা বসানো হয়। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় এই প্রযুক্তি। খেলা শুরু হওয়ার আগে প্রতিটি মাঠের অফসাইড লাইন ক্যালিব্রেশন করে নেয় এই ভার্চুয়াল অফসাইড লাইন প্রযুক্তি।
ভিএআর প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ব্রডকাস্ট ক্যামেরা
ভিএআর প্রযুক্তির প্রযুক্তির পেছনে রয়েছে ৩৩টি ক্যামেরা যার মধ্যে ৮টি ক্যামেরার রয়েছে সুপার স্লোমোশন সুবিধা, ৪টি ক্যামেরায় রয়েছে আল্ট্রা স্লো-মোশন সুবিধা,
কোথায় থেকে নিয়ন্ত্রণ হয় ভিএআর প্রযুক্তি?
অনেকেই ভাবতে পারেন এই ভিএআর প্রযুক্তি বুঝি খেলার মাঠ থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। আসলে তা কিন্তু নয়।এটি রাশিয়ার মস্কো শহরের International Broadcast Centre (IBC) থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নাম দেওয়া হয়েছে – ভিওআর অথবা ভিডিও অপারেশন রুম। এই ভিডিও অপারেশন রুম এর সাথে এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যবহৃত ১৩ টি মাঠেরই নেটওয়ার্ক করা রয়েছে এখানে বসেই উক্ত ১৩ মাঠে ভিএআর প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটি ক্যামেরার অ্যাকসেস পেয়ে থাকেন।