দৃশ্যপটটি ছিল টমক্রুজের “ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস” এর মতোই। যেখানে এলিয়েন মানবতার ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলেছিলো। বিপর্যয়কর দুঃস্বপ্নটি একটি আমেরিকান পরিবারের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের চোখের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়। সেই চিত্রনাট্যের মতোই যেনো অজানা উড়ন্ত একটি বস্তু উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য হলো সেডোনার পশ্চিম আকাশে। তবে মিলিয়ে যাওয়ার আগে প্রমাণ হিসাবে রেখে গেলো উজ্জ্বল একটি পথ।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় সময় ২৭ অক্টোবর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৪। অনেকেই দেখলেন একটি বড় লুপ এক্সজস্ট ট্রেইল। আকাশে উড়ে আসা ওই বস্তুটি স্পেস এক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না। কেননা এটা ছিল স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ রকেটের প্রথম ধাপ যা প্রশান্ত মহাসাগরে ড্রোন-চালিত পুনরুদ্ধারপ্ল্যাটফর্মে অবতরণ করে। এটি ছিলো ফ্যালকন ৯ রকেটের জন্য স্পেস এক্স এর অষ্টম উৎক্ষেপনের ঘটনা।
ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেসে ফ্লাইটটি প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। রকেটের প্রথম পর্যায়ে নয়টি মেরলিন ইঞ্জিনের শক্তিতে ঘণ্টায় ছুটেছিলো প্রায় ৪৬৬০ মাইল বা ৭৫০০কিলোমিটার গতিতে। উঠেছিলো ৮০ মাইল বা ১৩০ কিলোমিটার উচ্চতায়।
রকেটের দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিলো একটি মারলিন ইঞ্জিন যা রকেটের পেলোড বহন করে, আলাদা করে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
ঘন্টায় ১৬,৭৭৮ মাইল বা ২৭ হাজার কিমি গতিতে পৌঁছেছিলো ১৪২ মাইল বা ২৩০ কিলোমিটার উচ্চতায়। উড্ডয়নের সময় পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ছেড়ে দেয় ৫৩টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইটগুলি স্টারলিংক মিশনের অংশ এবং গ্রাম পর্যায়ে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করার জন্য নকশা করা হয়েছে।
রকেটের প্রথম ধাপটি শুরু হয় দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার উপর থেকে। যদিও রকেটের উড্ডয়নের পথটি সেডোনায় দৃশ্যমান ছিলো। অবশ্য ততক্ষণে সাই-ফাই লেখক ইয়ান ব্যাঙ্কসের “অবকোরস, আই স্টিল লাভ ইউ” নামক জাহাজের নামানুসারে স্পেসএক্স পুনরুদ্ধার প্ল্যাটফর্মে এসে প্রশান্ত মহাসাগরে ছুঁয়েছে রকেটটি।
রকেটের দ্বিতীয় পর্যায়টি স্যাটেলাইট বিতরণ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি নিম্ন পৃথিবীর কক্ষপথে চলতে থাকে।
রকেটের প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে অবতরণ পথের মধ্যে দর্শকরা দেখেছেন এর অদ্ভুত আকার- বৃহৎ লুপ এক্সজস্ট ট্রেইল। যেটি অনেকেই দেখেছেন, রকেটের প্রথম পর্যায়ে প্রশান্ত মহাসাগরে ড্রোন-পাইলটেড রিকভারি প্ল্যাটফর্মে ল্যান্ড করতে। আকাশ ফুঁড়ে উড়তে দেখা উজ্জ্বল বিন্দুটি ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ে। এসময় পেলোড নিম্ন পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ মুহূর্তে অনেকে রকেট থেকে ছোট ছোট টুকরো পড়তে দেখেছেন; এই ছিল স্যাটেলাইট যা রকেটটি পেলোডের অংশ হিসাবে সরবরাহ করছিল।
“ফ্যালকন ৯ হল দুই স্তরে পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট যা মানুষ এবং পেলোডগুলিকে পৃথিবীর কক্ষপথে এবং তার বাইরেও নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ পরিবহনের জন্য পরিকল্পিত ভাবে তৈরি করেছে স্পেসএক্স ৷ অর্থাৎ এটি হচ্ছে বিশ্বের প্রথম অরবিটাল শ্রেণীর পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট।
স্পেসএক্স তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, এটি পৃথিবীর কক্ষপথে বা তার বাইরেও নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ পরিবহণের জন্য স্পেসএক্স এর একটি যুগান্তকারী আবিস্কার। এর পুনঃব্যবহারযোগ্যতা স্পেসএক্সকে রকেটের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অংশগুলিকে রিফ্লাই করার অনুমতি দেয়। এটি বিশ্বের প্রথম পুনরায় ব্যবহারযোগ্য অরবিটাল রকেট। রকেটকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলার কারণে সামনে স্পেস এক্সপ্লোরেশন এর খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।
বস্তুত বস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে এই জল্পনার সূত্রপাত একটি ধূমকেতু থেকে। সাধারণ সেডোনা ফ্যাশনে, একটি এলিয়েন মহাকাশযান পর্যন্ত। যাইহোক, এই দর্শনের উৎস হতাশাজনকভাবে পার্থিব ছিল।
স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের মতে, “মহাকাশ ভ্রমণকে সহজ করে তুলতেই স্টারলিংক প্রকল্পের মতো মিশন। তার ভাষায়, “আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠতে চান এবং ভাবতে চান যে ভবিষ্যতটি দুর্দান্ত হতে চলেছে। তারই সুযোগ করে দেবে এই মহাকাশযান। এটি ভবিষ্যতে বিশ্বাস করা এবং ভবিষ্যত অতীতের চেয়ে ভাল হবে এমন চিন্তা করার বার্তা। আর আমি সেখানে যাওয়ার এবং তারকাদের মধ্যে থাকার চেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বেশি কিছু ভাবতে পারি না।”