প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ ঢাকার কমলাপুরের আদলে নির্মাণ করা হয় গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশন। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচের হিসাবে বছরে এই স্টেশনে ব্যয় ৩০ লাখ টাকার বেশি। অর্থাৎ মাসে খরচ আড়াই লাখ টাকার মতো। তবে তবে গত সাড়ে তিন মাসে এক টাকাওয় আয় হচ্ছে না এই স্টেশন থেকে। কেননা, স্টেশনটিতে এখন কোনো ট্রেনই থামে না। ফলে পুরোপুরো বন্ধ যাত্রীসেবা।
যদিও এখানে একজন স্টেশন মার্স্টার ও একজন ক্লার্ক রয়েছেন। তবে নেই রেলওয়ে পুলিশসহ অন্য কোনো লোকবল। রাতে নিরাপত্তার অভাবে এখানে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। অবশ্য প্ল্যাটফর্মে, রেললাইন ধরে হরহামেশাই ভিডিও বানাতে দেখা যায় টিকটকার কিংবা ইউটিউবারদের। স্থানীয় হকাররা সেখানে আড্ডা দেন। ভাসমান পতিতাদেরও আনাগোনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে ছয় বছর আগে বঙ্গন্ধু হাইটেক সিটি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে নির্মিত নির্মাণ শৈলী, নান্দনিকতায় আর আধুনিকতায় অনন্য স্টেশনটি এখন অনেকটাই অকেজো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পতিত আওয়ামী সরকার হরিলুটের জন্যেই বিপুল ব্যয়ে এ স্টেশনের মতো অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়েছিল। এখন দেখভালের অভাবে নষ্ট হচ্ছে স্টেশনের বিভিন্ন মূল্যবান স্থাপনা।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. খায়রুল ইসলাম জানান, এই রুট দিয়ে চলাচল করে ২০ জোড়া (৪০টি) ট্রেন। কিন্তু বিশাল এই স্টেশনে স্টপেজ মাত্র দুটি লোকাল ট্রেনের। এগুলোর একটি টাঙ্গাইল কমিউটার, অন্যটি সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এই স্টেশনে মাত্র দুজন কর্মরত আছি। নেই রেলওয়ে পুলিশসহ অন্য কোনো লোকবল। তাই সন্ধ্যা হলে নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতা বোধ করি।
প্রসঙ্গত, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের পাশে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশাল পরিসরে এই স্টেশন ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি রেলস্টেশন নির্মাণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। উদ্বোধনের পর এখান থেকে মাত্র একটি ডেমু ট্রেন চলাচল করতো। সে ট্রেনও করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে চালুর ছয় বছর পর স্টেশনে মাত্র দুটি ট্রেন থামতো। এই স্টেশন হয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের পথে ৪০টি ট্রেন চলাচল করলেও চলতো টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর নানা কারণে এখন সে দুটি ট্রেনও বন্ধ।
অথচ রেলস্টেশনটি নির্মাণের সময় ধরা হয়েছিলো, এই স্টেশন থেকে প্রতিদিন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করবে—এমনটা ধরে নিয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে স্টেশনটি থেকে দিনে গড়ে যাত্রী যাতায়াত করেছে মাত্র ৪৭ জন।