বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি থেকেই পরবর্তীতে সময়ের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসিস, আইএসপিএবিসহ অন্যান্য টেক-ট্রেডবডি। এ কারণেই সংগঠনটিকেই অন্যদের ‘বড়ভাই’ হিসেবে সামনের দিনের চ্যালেঞ্জেও সামনে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বলেছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে সামনে রোবটিক্স, কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা, আইওটি কিংবা ব্লকচেইনের মতো ডিজিটাল যন্ত্রের যুগে আমাদেরকে পৌঁছাতেই হবে। প্রযুক্তির এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। ডিজিটাল সংযুক্তি সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ সফল করতে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)সহ সংশ্লিষ্ট ট্রেডবডিসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে।
বুধবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বিসিএস ইনোভেশন সেন্টারে বিসিএস-এর প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছর পূতি উদযাপন, নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধন এবং স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
বিসিএস যুগ্ম মহাসচিব মুজাহিদ আল বেরুনী সুজনের সঞ্চালনায় সংগঠনের সভাপতি শাহিদ উল মুনীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিসিএস প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কামাল। ৩৫ বছরের প্রকাশনা নিয়ে বক্তব্য দেস বর্তমান সহ-সভাপতি জাবেদুর রহমান শাহীন এবং ওয়েব সাইটের হালনাগাদ বিষয় নিয়ে উপস্থাপনা দেন সিসটেক ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রাশেদুল হাসান।
এরপর বিসিএস‘র সাবেক সদস্যদের মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কামাল, জ্যেষ্ঠ সদস্য শাফকাত হায়দার, খন্দকার আতিক ই রাব্বানী, হাবিবুল্লাহ এন করিম এবং সাবেক সভাপতি এসএম ইকবাল এর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন মন্ত্রী। একইসঙ্গে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নব নির্বাচিত সভাপতি প্রকৌশলী সুব্রত সরকার, পরিচালক জহিরুল ইসলাম, মামলুক সাব্বির, আহমেদ হাসান জুয়েল, মঈনুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, জাবেদুর রহমান শাহীন, কাজী আশরাফুল ইসলাম, কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, আহসাব উল্লাহ খান জুয়েল, মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন, থিম সং এর জন্য নিয়াজ আহমেদ, ফোরকান বিন কাশেম সম্মানিত হন।
এছাড়াও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসিস এর পক্ষে হাবিবুল্লাহ এন করিম, আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক, বাক্কো’র পক্ষে শাফকাত হায়দার এবং ই-ক্যাব প্রতিনিধিরা পুরস্কার গ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের মাইলফলকের প্রথম সোপান হিসেবে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহারের যৌক্তিকতা সরকারকে তুলে ধরার প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় খুবই গৌরবান্বিতবোধ করছেন বলে উল্লেখ করেন বিসিএস এর চারবারের নির্বাচিত সভাপতি মোস্তাফা জব্বার।
মন্ত্রী বলেন, কম্পিউটার এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেপরিচিত করতে মেলা থেকে শুরু করে সারা দেশে আমরা ক্যাম্পিং করেছি, কম্পিউটারের ব্যবহার হাতে কলমে শিখিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরিতে এই সমিতির ভূমিকা অনেক বেশি। এই কার্যক্রমগুলোই পরবর্তিতে অনন্যারা অনুসরণ করেছে। বিসিএস বড় ভাইয়ের ভূমিকা পালন করেছে। এটা অস্বিকার করা যাবে না। তাই সামনে চ্যালেঞ্জেও তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে।
বিসিএস প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কামালের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, ১৯৮৭ সালে মাত্র এগারোজন সদস্য নিয়ে শুরু হওয়া এই সমিতি আজ একটি বিরাট মহিরূহে রূপান্তরিত হয়েছে। সাবেক এই বেসিস সভাপতি বলেন বিসিএস অন্যকোন ট্রেডবডির মতো নয়। এই সংগঠনটি নিজেদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে গর্ব করার জায়গায় সংগঠনটিকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। বেসিস, আইএসপিএবি, ই-কমার্সসহ ডিজিটাল প্রযুক্তিখাতের ট্রেড বডিসমূহের জন্ম বিসিএস-এর হাত ধরেই হয়েছে।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রযুক্তিবান্ধব নীতির ফলে সংগঠনটি ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিযাত্রায় ভূমিকা রাখতে যে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি সামনের দিনগুলোতে এই সংগঠনটিকে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে হবে উল্লেখ করে বলেন, যারা পথ দেখায় তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়।
বিসিএস যদি প্রতিষ্ঠিত না হতো তাহলে আমি আজকের জায়গায় আসতাম না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কম্পিউটার এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরিচিত করতে মেলা থেকে শুরু করে সারা দেশে আমরা ক্যাম্পিং করেছি, কম্পিউটারের ব্যবহার হাতে কলমে শিখিয়েছি।এর ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরিতে এই সমিতির ভূমিকা মন্ত্রী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সামনের দিন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি বদলে যাওয়ার দিন। তিনি গত তের বছরে দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, দেশে শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি হওয়ায় ভয়েজ কলের পরিমান প্রতিদিনই কমছে। মানুষ এখন ডেটা বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে কথা বলছেন। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০০৭ সালে সাড়ে সাত জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতেন সাড়ে সাত লাখ মানুষ। বর্তমানে দেশে ৩৪শত জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করছেন প্রায় তে রকোটি মানুষ।
পরে মন্ত্রী বিসিএস নতুন ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন এবং সমিতির ৩৫ বছরের পথচলার তথ্য সম্বলিত প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।