পাঁচ শতাধিক আবেদনের মধ্য থেকে ৩৬টি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন, উইনার এবং মেরিট বিভাগে মোট ১০৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পেয়েছে পঞ্চম বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড-২০২২। আবেদন থেকে ২০০ সম্ভাবনাময়ী উদ্যোগের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৬৮টি উদ্যোগ বেছে নেন বিচারকরা।
সোমবার রাতে রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেয় দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিস। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যাওয়ার্ড (এপিকটা)-২০২২ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে এবারের চ্যাম্পিয়নরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এক ভিডিও বার্তায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দুই হাজারের বেশি বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানে এখন লক্ষাধিক তরুণ তরুণী কাজ করছে। সরকারের নীতিগত সহায়তা নিয়ে দেশের প্রযুক্তি শিল্পখাতকে একটি শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময়ী খাত হিসেবে পরিণত করেছে। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, আমেরিকার মতো দেশের কোম্পানি আমাদের দেশ থেকে ফিনটেক, এ্যডুটেক, হেলথটেক এর মতো সল্যুশন নিচ্ছে। যার ফলে সফটওয়্যার খাত থেকে আমরা এখন ১.৪ বিলিয়ন ডলার আয় করছি। আর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের।
দেশের সম্ভাবনাময়ী তরুণদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তির দিকে মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পলক বলেন, বর্তমান বিশ্বে সফটওয়্যার হচ্ছে ভবিষ্যত অর্থনীতির চালিকাশক্তি। ২০৪১ সাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভিশন-২০৪১ দিয়েছেন, একটি বুদ্ধিদীপ্ত, সাশ্রয়ী, জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশের; সেখানে মূল চালিকাশক্তি হবে সফটওয়্যার শিল্প থেকে আমাদের রপ্তানী আয়। একই সাথে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পুর্ণভাবে সফটওয়্যার শিল্প নির্ভর হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশের আইসিটি খাতে ২০ লাখ কর্মসংস্থান রয়েছে আর বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে আমাদের আইসিটি রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১০৪ কোটি ডলার। আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে এটিকে ৫শ কোটি ডলারে উন্নীত করতে চাই আর অন্তত ৩০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। আজ যারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে ভবিষ্যতে এই লক্ষ্যমাত্রা তাদেরকে নিয়ে পূরণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে বিজয়ীরা আসন্ন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আইসিটি অস্কার এপিকটা প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, হংকং, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে লড়াই করে দেশের পতাকাকে বিশ্বে সমুন্বত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পলক।
অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ শুরু হয় কঞ্জুমার ক্যাটাগরি থেকে। এই ক্যাটাগরির মধ্যে ইন্সুরেন্স ও ফাইন্যান্স উপ বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেভিংস প্রোডাক্টস। এরপর ডিজিটাল মার্কেটিং ও অ্যাডভাইজিং উপ-বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন ফ্লুয়েন্ট সিআরএম এবং উইনার হয়েছে পোস্ট এক্স। স্মার্ট হোম ট্রাঞ্জেকশন বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইনক বে প্রোডাক্ট পার্সোনালাইজার। মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট উপ-বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে র্যাবিট হোল। রিটেইল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সাব-ক্যাটাগরির চ্যাম্পিয়ন ইজি মার্চেন্ট অ্যাপ। রিটেইল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনে উইনার হয়েছে ই-কমার্স খাতের প্রতিষ্ঠান মেনি কার্ট। ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ট্রামিল ও উইনার অভিযাত্রী।
এছাড়াও কমিউনিটি সেবায় ‘প্রবাসবন্ধু’ অ্যাপস চ্যাম্পিয়ন, নূর ইসলামী অ্যাপ উইনার এবং মেরিট সম্মাননা জিতেছে পাঠক অ্যাপ। এড্যুকেশন সাব ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন সহপাঠী, আইসিটি অ্যানাবেল স্মার্ট এড্যুকেশন আএসই উইনার এবং বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়াড অনলাইন গেমস জিতেছে মেরিট অ্যাওয়ার্ড।
হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন আইএমসিআই অ্যাপ্লিকেশন, উইনার হয়েছে টেগোমোগো প্যারেন্টিং অ্যাপ ও মেরিট পুরস্কার পেয়েছে স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩।
ডটলাইনের সৌজন্যে পুরস্কার বিতরণের আগে সভাপতির বক্তব্যে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশীয় যেই আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলো ই-গভর্নেস এর প্রকল্পের কাজ করে থাকে বেসিস সদস্য সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। তিনি বলেন, যে প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে কাজ করছে সেখানে যেন ঐ প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকে। এতে করে বিদেশেও কাজ পেতে আমাদের জন্য সহজ হয়। পাশাপাশি দেশের ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে বেসিসকে সম্পৃক্ত করার দাবিও জানান তিনি।
রাসেল আরো বলেন, আজকে ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডে যারা চ্যাম্পিয়ন হবে তারা এপিকটায় যাবে। আমরা তাদের গ্রুম করার চেষ্টা করি। বিগত বছরগুলোতে কয়েকটি ধাপে আমাদের বাংলাদেশি কোম্পানিরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেখানে। আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে, এবারও এপিকটা’তে আমরা অ্যাওয়ার্ড নিয়ে আসব।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি জসীম উদ্দিন, বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড-২০২২ এর আহ্বায়ক রাশিদুল হাসান, প্রধান বিচারক আবদুল্লাহ এইচ কাফি বক্তব্য রাখেন। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার সময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ।