শিক্ষাবিদদের কাছে শিক্ষামন্ত্রীর ৪ প্রশ্ন
কোভিড পরবর্তী রূপান্তিরিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ব্লেন্ডেড লার্নিং শিক্ষণ পদ্ধতিতে সামতার পরিবেশ নিয়ে আসবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তার মতে, ব্যক্তি ও সমাজের আন্তর্নিহিত শক্তি ও সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে চলতে হবে স্মার্ট শিক্ষাপদ্ধতির পথে। এক্ষেত্রে ব্লেন্ডেড শিক্ষার ইকো সিস্টেমটি যেনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই সাশ্রয়ী, সুলভ ও সহজলভ্য এমন একটি টেকসই অবকাঠামো তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। এজন্য যুথবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ডা. দীপু মনি।
মঙ্গলবার রাতে হোটেল শেরাটনে অনুষ্ঠিত ‘এক্সেলারেটিং ব্লেন্ডেড এ্যডুকেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে উপস্থিত শিক্ষাবিদদের সামনে তিনটি প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী। জানতে চাইলেন, কোন ধরনের শিক্ষণ প্রক্রিয়া, কনটেন্ট ও রিসোর্স এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে? আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য সবচেয়ে কার্যকর মডেল কোনটি? মূল্যায়নের সর্বোত্তম পদ্ধতিই বা কী হবে- যার মাধ্যমে নিজে থেকেই শেখা যায়, কী শেখানো হয়েছে তা বোঝা যায় এবং সর্বোপরি মূল্যায়নটা হয় যথাযথ।
মন্ত্রী বলেছেন, আজকে সভায় সবাই একমত হয়েছেন যে, আমাদের শিক্ষার্থীরা একবিংশ শতাব্দীর সুযোগ কাজে কীভাব লাগিয়ে শিখতে পারে এবং চ্যালেঞ্জগুলির জন্য প্রস্তুত হতে পারে তার সমীকরণটি মেলানো ক্ষেত্রে চিরায়ত শিক্ষাপদ্ধতি আজ যথেষ্ট নয়। এবং সম্মিলিতভাবে পরিবর্তনের জন্য কাজ করার এটাই উপযুক্ত সময়। আর এক্ষেত্রে ব্লেন্ডেড শিক্ষা সেই সমীকরণে অন্যতম অনুষঙ্গ। তাই আমাদের সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই কীভাবে ২০৪১ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলদে একে অপরের প্রতি আস্থার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বতর্মান সময়ে কীভাবে আমরা আমাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারি এবং কীভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য আরো মান সম্পন্ন সম্পদ তৈরি করতে পারি তা বের করতে হবে।
করোনা অপ্রত্যশিত হলেও ওই সময়ে শিক্ষকেরা স্কুলে না গিয়েই অনলাইনে ১০ লাখের মতো কোর্স নিয়েছেন জানিয়ে দীপু মনি আরো বলেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা কিভাবে আরো সুষম ব্লেন্ডেড পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে পারেন সে জন্য আমরা হাইটেক, লো-টেক এবং নো-টেক পদ্ধতির উপযোগী শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করছি। জোর দিয়েছি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে। ফলে তারা শিখতে শিখতেই আয় করতে পারছেন।
ছয় মাসের মধ্যে দেশের এক লাখ ৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ : পলক
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশের এক লাখ ৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে বলে শিক্ষামন্ত্রীকে আশ্বাস দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়ে আইসিটি বিভাগ থেকে প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি ১৭টি ল্যাপটপ ও একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ বোর্ডসহ ১৩ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের তথ্য তুলে ধরেন পলক। বললেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রোবটিকস ফ্যাবরিকেশন ল্যাব, এআর, ভিআর নিয়ে গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আরো আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই বছরেই ওয়ার্ল্ডড ইকনোমিক ফোরামের সহায়তায় হয়তো আমরা সেন্টাবর ফর ফোর আইআর স্থাপন করতে সক্ষম হবো। এছাড়াও ইডিসি প্রকল্পের অধীনে আমরা একই সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২৭০০ কলেজকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। শিক্ষায় ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইস দেশেই তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কুমন শিক্ষ পদ্ধতি চালু করছি। নজর দেয়া হচ্ছে স্টেম শিক্ষা ব্যবস্থায়।
বক্তব্যে কোভিডের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্লেন্ডেড শিক্ষা ব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল। তিনি বলেন, আমাদের সদিচ্ছাই নতুন পরিবর্তীত ব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করবে।
কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে আমরা বলতে গেলে শুন্য থেকে শুরু করেছিলাম। এই হার ছিল শতকরা ০.৪ শতাংশ। কিন্তু যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে এই হারটাই থাকে সর্বোচ্চ। তবে আমাদের সরকার এখন এই হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও অ্যাস্পায়র টু ইনোভেট (এটুআই) এর যৌথ সহযোগিতায় এই সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।
আই অ্যাম দ্য সল্যুশন, নট এআই : আনীর চৌধুরী
সভার শুরুতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড তানিয়া মিলবার্গ এবং এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী। উপস্থাপনায় আনীর চৌধুরী জানান, ২০২৭ সালের মধ্যে ব্লেন্ডেড শিক্ষা বাস্তবায়ন নিয়ে এরইমধ্যে আইসিটি বিভাগ থেকে ৬৩টি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৯০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করে ২.৮ মিলিয়ন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া ও ৪৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এর মধ্যেমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণার্থী হয়ে উঠবেন একেকজন সমস্যার সমাধান কারী। বস্তুত, তারাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জায়গাটা দখল করবে। বাংলাদেশের ব্লেন্ডেড লার্নিং এর স্লোগান হবে আই অ্যাম দ্য সল্যুশন নট এআই।
এরপর দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্ল্যান্ডেড শিক্ষা উপযোগী করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কী কী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন প্যানেল আলোচনায় নিজেদের বক্তব্য তা তুলে ধরেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও বিভাগের সচিব সোলেমান খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের পিড তানিয়া মিলবার্গ। আরো বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপার্সন রুবানা হক।
সভাপতির বক্তব্যে এটুআই প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, আমাদের বক্তারা তাদের বক্তব্যে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। এগুলো হলো কানেক্টিভিটি, ডিভাইস ও ইন্টারেক্টিভ কনটেন্ট। আবার আমাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছে তিন জন মন্ত্রী। একজন মন্ত্রী। একজন প্রতিমন্ত্রী এবং আরেকজন উপমন্ত্রী। তারা তিনটি গুণের অধিকারী- তারা সৃজনশীল, সুবক্তা এবং স্মার্ট। এছাড়াও তাদের মধ্যে রয়েছে সম্প্রীতি, প্রজ্ঞা ও বোঝাপোড়ার গুণ। এই তিনই যেনো জাতীয় সংখ্যা। এই সংখ্যা সবার।