সালাউদ্দিন সেলিম
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্থাপন করা হচ্ছে মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে হবে এই মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র । এটি বাস্তবায়ন হলে ভাঙ্গা থেকে মহাকাশ অবলোকন করা যাবে। এছাড়া মহাকাশ গবেষণার সুযোগও তৈরি হবে। কিন্তু এই কেন্দ্র হিসেবে ভাঙ্গাকেই বেছে নেওয়াকে কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণ হিসেবে মনে করেছেন, আসলে কিন্তু তা নয়- এর একটি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।
ভাঙ্গাকেই কেন মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হলো?
পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে মহাকাশ অবলোকন করা গেলেও কিছু কিছু বিশেষ স্থান রয়েছে যেখান থেকে গ্রহ, নক্ষত্র ও বিভিন্ন উপগ্রগের অবস্থান তুলনামূল ভালোভাবে অবলোকন করা যায়। ভৈাগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গাও ঠিক তেমিন একটি বিশেষ জায়গা।
মূলত; পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে রাখা বিষুবরেখা, কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত চারটি দ্রাঘিমা রেখার সংযোগস্থল রয়েছে পৃথিবীতে মোট ১২টি। তাত্ত্বিকভাবে বলা হয়ে থাকে, মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য এই স্থানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ১২টি ছেদবিন্দুর ১০টিই অবস্থিত বিভিন্ন সাগর-মহাসাগরে। স্থলভাগে এরকম মাত্র দুটি ছেদবিন্দু রয়েছে যার একটি হলো সাহারা মরুভূমিতে এবং অন্যটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভাঙ্গারদিয়া গ্রামে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল ২০১৯ সালে এ তথ্যটি আলোচনায় নিয়ে আসেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সেখানে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু মানমন্দির’ স্থাপনের প্রস্তাবও করেন। তিনি উল্লেখ করেন এমন একটি সময় আসবে যখন পৃথিবীর জোর্তিবিজ্ঞানীদের অন্যতম প্রধান দৃষ্টি থাকবে ভাঙ্গার এই অঞ্চলটির দিকেই। সেই প্রস্তাবের সূত্র ধরেই মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত কেন্দ্রে সাধারণ জনগণের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ। এছাড়া এখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রনমি বা অ্যাস্ট্রফিজিক্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীদের জন্য উপযোগী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প আয়োজনের সুযোগ থাকবে। গবেষকদের জন্য থাকবে মহাকাশ বিজ্ঞানে গবেষণার সুযোগ।
এখন সহজেই অনুমেয়, পলিটিক্যাল নয়, বৈজ্ঞানিক কারণেই ফরিদপুরের ভাঙ্গাকেই মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
লেখক: তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ