ব্যাংকে না গিয়েও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অর্থ লেনদেনের সেবা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। সেই হিসেবে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার এক যুগ হতে চলেছে।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এই মাধ্যমটিতে লেনদেন হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। আর একক মাসের হিসাবে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা এই সেবা চালুর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল, যেটা ছিল সর্বোচ্চ লেনদেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, নভেম্বর মাসে এমএফএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, উত্তোলন, বেতন-ভাতা সবকিছু মিলিয়ে লেনদেন হয় ৯২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। পরের মাস ডিসেম্বরে লেনদেন বাড়ে চার হাজার সাত কোটি টাকা।
গত বছরের ছয় মাসের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি, আগস্টে ৮৭ হাজার ৪৪৬, সেপ্টেম্বরে ৮৭ হাজার ৬৮৫ ও অক্টোবরে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা এমএফএস-এর মাধ্যমে লেনদেন হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত হিসাবধারী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩টি। গত বছরের জুলাই মাস শেষে হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৩টি।
হিসাব অনুযায়ী, ছয় মাসে হিসাব বেড়েছে ৯৯ লাখ ২৫ হাজার ৮১০টি। এসব গ্রাহকের মধ্যে পুরুষ গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭০ জন ও নারী গ্রাহক ৮ কোটি ১২ লাখ ৪ হাজার ৪৯৩ জন। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৬৩৭ জন।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বছর ব্যবধানে মোবাইলে লেনদেন বেড়েছে ১২৪.৮৫ শতাংশ। আর কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ৪৬.৫০ শতাংশ। যদিও এক বছরে কার্ডে বৈদেশিক লেনদেন বেড়েছে ১৫৫.৬৩ শতাংশ।
দেশে ১৯৯৬ সালে শুরু হয় ব্যাংক কার্ডে লেনদেন। আর গত ৪ বছরে কার্ডে লেনদেন বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ। একইসমেয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে ১২৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম), ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন (সিডিএম), ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) ও পয়েন্ট অব সেলসের (পিওএস) মাধ্যমেও লেনদেন বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এটিএমের মাধ্যমে ২০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা, সিআরএমের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ও পিওএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১১৬ টাকা। ৪ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এটিএমে ২৯ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা, সিআরএমে ৬ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা ও পিওএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬১৪ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনা শুরু হওয়ার আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা হানা দিলে ওই বছরের ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। আর সদ্যসমাপ্ত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এটি ১৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৬৬৫ টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে কার্ডের মাধ্যমে মানুষের লেনদেন বেড়েছে ২২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন হয়েছিল ২৫০ কোটি টাকা। এ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে ডিসেম্বরে এটি ১৫৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা।
২০২১ সালের জুন মাসে দেশে ই-কমার্সের রেকর্ড ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা প্রকাশিত হওয়ার পর দেশের ই-কমার্স ব্যবসায় ব্যাপক ধস নামে। ওই বছরের ডিসেম্বরে লেনদেন নেমে দাঁড়ায় ৮২৫ কোটি টাকায়। তবে এ চিত্র কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বিদায় ২০২২ সালে। ওই বছরের এপ্রিলে আবারও ই-কমার্সের লেনদেন হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। আর ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।