আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্রদের পক্ষ থেকে অংশ নেয়া দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ? আর আগামী জুন মাসে পদত্যাগ করতে পারেন ছাত্র আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড খ্যাত সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম! খবর বলছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে গড়তে যাওয়া নতুন দলের সদস্যসচিব হতে যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম।
সঙ্গত কারণেই তিনি যদি পদত্যাগ করেন; তবে আইসিটি ও টেলিকম খাতটি শুন্য হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা হওয়ায় এই খাতটিও কিছুটা অন্তরালেই রয়েছে। কার্যত এই খাতের তিনটি মন্ত্রণালয়ই চলছে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায়। খাত সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোও চলছে প্রশাসক দিয়ে। খাত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে জনপ্রতিনিধিত্বশীল অংশ গ্রহণ কমছে। বণিক সংগঠনগুলোর নেতাদেরকেও কার্যক্রমে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বিচ্ছিন্ন ভাবে বেশ কিছু রিফর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে বটে। তবে ক্রমেই দূরত্ব তৈরি হচ্ছে নাগরিকদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে দেশের বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম খাতটি অনেকটাই অন্তরালে চলে যাওয়ার শঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নাহিদ ইসলাম শুরুতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণাণলয়ের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। এরপর নতুন দায়িত্ব হিসেবে যুক্ত হন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে। এই মন্ত্রণালয়ে বেশি সময় দিলেও তার দিক নির্দেশনাতেই আইসিটি ও টেলিকম মন্ত্রণালয় পরিচালিত হচ্ছিলো। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছিলেন ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইসিটি নীতি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে তিনি থাকবেন কি না সে বিষয়টিও পরিস্কার হওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ‘এখনো জানেন না’ বলে উত্তর দিয়েছেন ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। একইভাবে কে পদত্যাগ করবে বা কারা রাজনৈতিক দলে আসবে সুনির্দিষ্টভাবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা জানিয়েছে, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি ১৫ তারিখের মধ্যে দল ঘোষণার আগে সরকার থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। আর আগামী জুন মাসে পদত্যাগ করতে পারেন সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। নতুন দল প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবে। কমিটিতে আহ্বায়ক কে হবেন তা জানা না গেলেও সদস্যসচিব হতে যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম। ছাত্রদের নতুন দলের গঠনতন্ত্রের কাজ চলমান রয়েছে। নতুন দল ঘোষণার আগে ২৪ দফার ইশতেহার তৈরিতে কাজ করছে তারা। এজন্য ১৭ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে বলে জানা গেছে।
পত্রিকাটিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ, আহত এবং জনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দেবেন। তাই সরকারে থাকা ছাত্রপ্রতিনিধিদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সাড়া দিয়ে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে তারা যেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা অধীর আগ্রহে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। যেভাবে ফ্যাসিস্ট-খুনি হাসিনাকে নামিয়েছে, তেমনিভাবে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ফ্যাসিস্টদের দোসর ও সহযোগীদের তাড়িয়ে মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠন করবে ছাত্রসমাজ।