চলতি সপ্তাহেই দাম কমছে মোবাইল ইন্টারনেটের। এর মধ্যে আগামী ৮ নভেম্বর টেলিটক এবং ১০ নভেম্বর থেকে বেসরকারি তিন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ, রবি ও বাংলালিংককেও প্যাকেজ আপডেটেরে নামে গ্রাহকের কাছে চড়া দামে ডেটা বিক্রি থেকে ফিরে আসতে হবে।
রবিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির প্রধান কার্যালয়ে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনের দুই মাস সামনে রেখে ইন্টারনেটের দাম বাড়ানো সরকারবিরোধী কাজ, চক্রান্ত—বলে মন্তব্য করে ওই বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেলিকম অপারেটরদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে দেশের জনগণের পক্ষে থাকতে হবে। রেগুলেটর হয়েও বিটিআরসি ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকা পালন করার পরও আপনারা যে আচরণ করছেন তা জনগণ মেনে নেবে না। আপনারা ডেটা বিক্রি করবেন কিন্তু সময় নয়।’
বৈঠকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, কমিশনের কমিশনার-সহ পদস্থ কর্মকর্তা ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি সদ্য বিলুপ্ত তিন দিন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় মন্ত্রী মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছেন ইন্টারনেটের দাম কমাতে। আগের তিন দিনের মেয়াদের প্যাকেজের দামে সাত দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ গ্রাহকদের অফার করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী রবিবার রাতে মোবাইল ফোনে ডিজিবাংলা-কে বলেন, ‘অপারেটররা সাত দিনের মেয়াদের প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে। এটা তারা করতে পারে না। আর টেলিটক প্যাকেজ ঠিক করতে গিয়ে মূল্য নিয়ে যে ত্রুটিটি হয়েছিলো তা সংশোধন করে আগামী ৮ নভেম্বর থেকে নতুন প্যাকেজ দেবে। অপরদিকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে অপর অপারেটরদের আজকের (রবিবার) বৈঠক প্রতিপালন করতে হবে। আমি আশাকরি, অপারেটরদের বোধদয় হবে। তারা ৯৫টি প্যাকেজকে ৪০টিতে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দাম বাড়াবে না। তখন ইন্টারনেটের দাম কমাবে।
বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে মন্ত্রী তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মাস দুয়েক পরে দেশে নির্বাচনের আগে মোবাইল অপারেটরগুলোর ইন্টারনেটের দাম বাড়িয়ে দেওয়াটা ‘সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র’। তাছাড়া তারা ডেটা বিক্রি করে সময় বেধে দিয়ে বাণিজ্য করতে পারে না। ডেটার দামেই তাদেরকে ডেটা বিক্রি করতে হবে। দোকান থেকে চাল কিনে যেমনি ক্রেতা তার প্রয়োজন মতো খরচ করতে পারে ডেটার ক্ষেত্রেও একই সুবিধা থাকতে হবে। এর ব্যতিক্রম মানেই ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘন।
গ্রাহকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশিকা দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সে অনুযায়ী, আগে যেখানেন মুঠোফোন অপারেটরগুলো সেখানে ৩, ৭, ১৫, ৩০ ও সীমাহীন মেয়াদে মোট ৯৫টি প্যাকেজ দিতে পারতো তা ৭ ও ৩০ দিন এবং সীমাহীন মেয়াদি (আনলিমিটেড) প্যাকেজে মোট ৪০টি প্যাকেজে সীমাবদ্ধ করা হয়।
কিন্তু নতুন নির্দেশিকা দেয়ার পর তা মেনে নিলেও মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বলেছিল, ৩ দিনের প্যাকেজ না থাকায় গ্রাহকদের এখন বাড়তি দামে ৭ দিনের প্যাকেজ কিনতে হবে। আর্থিক কারণে যারা কম মেয়াদি প্যাকেজ ব্যবহার করেন, তাদের ওপর এর প্রভাব পড়বে বেশি। সরকার ও অপারেটর উভয় ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক আর্থিক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্টারনেট গ্রাহকও কমতে পারে।
সঙ্গত কারণেই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের পর দেখা গেলো, গত ৩০ সেপ্টেম্বর একজন গ্রাহক যখন কোনো একটি মুঠোফোন অপারেটরের ৩০ দিন মেয়াদি ৪০০ মিনিট ও ২৫ জিবির একটি প্যাকেজ ৫৭৩ টাকায় কেনেন; মেয়াদ শেষে সেই একই প্যাকেজ কিনতে তাকে ব্যয় করতে হয় ৬৫০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ৭৭ টাকা বেশি গুনতে হয় সেই গ্রাহককে।
এমন পরিস্থিতিতে রোববার বিটিআরসি’র বৈঠকে পুরোনো নির্দেশিকার দামে ফেরত যাওয়ার জন্য অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। তবে ওই বৈঠকে উপস্থিত মোবাইল অপারেটর প্রতিনিধিরা কিছুদিন আগেই নতুন নির্দেশিকা কার্যকর করা হয়েছে। হুট করে এখন আবার তা পরিবর্তন করা চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়েছেন। তবে তাদের এই যুক্তি ভালোভাবে নেননি মন্ত্রী। একইসঙ্গে যেহেতু বৈঠকে অপারেটরগুলোর প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন না; তাই তাদেরকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ অক্টোবর থেকে তুমুল জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও ‘গ্রাহক স্বার্থ’ বিবেচনা করে বাদ দেওয়া তিন দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ। একইসঙ্গে আরও বাদ দেওয়া হয় ১৫ দিনের ডাটা প্যাকেজও। এখন ডাটা প্যাকেজ আছে ৭ ও ৩০ দিনের এবং আরেকটি আছে আনলিমিটেড প্যাকেজ। কিন্তু এই প্যাকেজে কৌশলে অপারেটররা দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকেরা। তাদের অভিযোগ, তিন দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ না থাকায় সাত দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ ও অন্যান্য প্যাকের দাম বাড়িয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছে। দাম বাড়িয়ে অপারেটররা সরকারে বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলে মনে করছে সরকারি মহল। খোদ উপদেষ্টাও বিষয়টিকে সাধুবাদ জানানি। ফলে মোবাইল অপারেটরগুলোর ইন্টারনেটের যতটুকু দাম বাড়িয়েছে তা কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।