দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মহাকাশ থেকে তারা ভিড় জমাচ্ছে পৃথিবীর আকাশে। বিভিন্ন সময়ে জনসাধারণ আর সামরিক পাইলটদের নজরে আসে অচেনা-অজানা উড়ুক্কু যান। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন আকার-আকৃতির বস্তু দেখার রিপোর্ট করেন তারা। যেগুলিকে ভিনগ্রহবাসী বা এলিয়েন কিংবা ইউএফও বলে দাবি করা হয়। কিন্তু কোথা থেকে আসছে ওইসব অজানা কথিত ‘এলিয়েনদের যান’? কারও জানা নেই, কী-ই বা আছে এই উড়ন্ত যানে? পৃথিবী থেকে কোথায় যায় সেটি? মানবজাতির কাছে এর উৎস যেমন অজনা; তেমনি এই রহস্যের সমাধান আজও অধরা।
ইউএফও তদন্তে ১৬ জনকে বেছে নিয়েছে নাসা
সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে বিমান চলাচলের সময় পাইলটরা মহাশূন্য কিছু অজানা জিনিস উড়তে দেখেছিল। তা রিপোর্টও করেছিল বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তেমন কিছুই জানা যায়নি। নাসার নজর এড়ায়নি তা। নাসা’র বিশ্বাস, অজ্ঞাত বস্তু অধ্যয়ন করা বায়ু নিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। স্বাধীনভাবে ‘আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা বা ইউএপি-কে বহির্জাগতিক জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করে এমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তাই নাসা এবার স্বাধীন দল তৈরি করে তদন্তে নেমেছে। ১৬ সদস্যের এই স্বাধীন দলটি নয় মাস ধরে কাজ করবে, যা শুরু হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর থেকে। অশ্রেণিবদ্ধ ডেটা ব্যবহার করেই শুরু হয়েছে তদন্ত। অর্থাৎ, এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের কোনো সংস্থার কাছে গোপন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত থাকলেও তা গবেষণার অন্তর্ভূক্ত হবে না।
নাসা’ তদন্ত দলে আছেন সাংবাদিকও
নাসার পক্ষ থেকে গবেষক দলটি সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন নাসার ‘সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেট’-এর সহযোগী ব্যবস্থাপক ড্যানিয়েল ইভানস। আর গবেষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সায়মনস ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ডেভিড স্পিগেল। নাসার তরফে নির্বাচিত গবেষণা গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, সমুদ্রবিজ্ঞানী, মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। প্রাক্তন মহাকাশচারী স্কট কেলি এবং নাদিয়া ড্রেক ছাড়াও সাংবাদিককেও রাখা হয়েছে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা বলেছে, গবেষণাটি নাসা এবং অন্যান্য সংস্থার জন্য ইউএপি-র প্রকৃতির উপর ভবিষ্যতের অধ্যয়নের ভিত্তি স্থাপন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। নাসা বলছে, এ বিষয়ে তদন্ত কেবল নাসার লক্ষ্যের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র গেল কয়েক বছর ধরে ‘ইউএফও দর্শনে’র ঘটনাগুলোকে ‘ইউএপি’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছে।
আকাশে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণা মিলবে তদন্তে
নাসা জানিয়েছে, ইউএফও-কে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। নাসার সহযোগী প্রশাসক টমাস জুরবুচেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মহাকাশ ও বায়ু মণ্ডলে অজানা অন্বেষণ করাই নাসার লক্ষ্য। আমাদের আকাশে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণা দিতে সিদ্ধহস্ত নাসা। সেখানে ইউএফও সম্পর্কিত ডেটা ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
মহাকাশে উড্ডীন বস্তুগুলি কী, এভাবে কি এলিয়েনরা আসতে পারে
নাসা মূলত জুন মাসে এই গবেষণার খবর ঘোষণা করেছিল। তারপরে সংস্থার তরফে বলা হয়েছে ইউএফও নিয়ে গবেষণার অভাবে এই ধরনের ঘটনাগুলির প্রকৃতি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছনো কঠিন করে তোলে। এখন সেই অভ্যাস শুরু করা হয়েছে, লক্ষ্য একটাই অজানাকে জানা। মহাকাশে উড্ডীন বস্তুগুলি কী, আর এভাবে কি এলিয়েনদের পৃথিবীতে আসা সম্ভব।
চলতি বছরের শুরুর দিকে একজন শীর্ষ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা আইন প্রণেতাদের বলেছিলেন যে, অর্ধ শতাব্দীতে UFOদের বিষয়ে প্রথম পাবলিক হিয়ারিংয়ের সময় গত ২০ বছরে আকাশে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর খবর পাওয়া গিয়েছে। দেশটির নেভাল ইন্টেলিজেন্সের ডেপুটি ডিরেক্টর স্কট ব্রে, একটি হাউস নিরাপত্তা প্যানেলকে বলেছেন “২০০০ এর দশকের শুরু থেকে আমরা সামরিক নিয়ন্ত্রিত প্রশিক্ষণ এলাকা এবং প্রশিক্ষণ রেঞ্জ ও অন্যান্য মনোনীত আকাশসীমায় অননুমোদিত অথবা অজ্ঞাত বিমান বা বস্তুর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখেছি”।
গত বছর জারি করা পেন্টাগনের প্রতিবেদন বলছে,২০০৪ সাল থেকে ১৪০ টিরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য দৃশ্যের প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য অপর্যাপ্ত তাথ্য নথিভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন সামরিক পর্যবেক্ষকরা। স্বাধীন তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের মধ্যভাগে প্রথম বারের মতো এই রহস্যের জট প্রকাশ্যে নিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে নাসা।