বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারকে আলাদা করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনলাইনে সরব হয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। দাবির সপক্ষে জনমত গড়তে আলাদা লোগো তৈরি করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন তারা। লোগোতে তিন ধরণের নকশা দেখা গেছে। একটিতে আছে লাল বৃত্তের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র এবং সোনালী শাপলার মুকুট আর সবুজ ভরাট পাতার মালা। অন্যটিতে সোনালী মুকুটহীন। তৃতীয়টিতে লালবৃত্তের মধ্যে কোনো মানচিত্র নেই।
ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল থেকেই কনিষ্ঠ (জুনিয়র) থেকে শুরু করে জ্যেষ্ঠ (সিনিয়র) কর্মকর্তারা এ লোগো পোস্ট করছেন। নিজেদের দাবি জানাচ্ছেন। তবে এই প্রতিবেদন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো পেজ দেখা যায়নি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের ফেসবুক পেজ থেকেও এ নিয়ে কোনো পোস্ট দেয়া হয়নি। সেখানে এখনো ঝুলছে ১৫ আগষ্টের শোকের ব্যানার।
তবে জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য বাকি ৫০ শতাংশ কোটা, বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারভুক্ত না রাখার বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে ক্যাডারগুলোর কর্মকর্তারা নিজস্ব অবস্থান থেকে দাবির পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করে যাচ্ছেন। বিচ্ছিন্ন ভাবে নতুন লোগোর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে দেয়া পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে। এমনই একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘ক্যাডার শব্দটা এদেশের সাধারণ জনমানুষের কাছে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়। কোনো সরকারি চাকরিজীবীর সাথে এ পরিচয় মানানসই নয়। আমিসহ প্রশাসন পরিবারের কেউ ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দিতে ইচ্ছুক নই। আমরা দেশের জন্য কাজ করি। সার্ভিসই আমাদের লক্ষ্য। আমাদেরকে সার্ভিস করে দেয়া হোক। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস গঠন করা হোক। এই সার্ভিসে আলাদা করে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেয়া হোক। প্রশাসন ক্যাডার বিলুপ্ত করা হোক।‘
স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পোস্ট দেয়া। কর্মকর্তারা ফেসবুকে লিখেছেন, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসই হতে পারে জনপ্রশাসন–সম্পর্কিত সবচেয়ে কার্যকর সংস্কার।
সংস্কারের পক্ষে নিজেদের ওয়াল থেকে ‘কারও সাথেই বৈষম্য নয়, আন্তঃক্যাডার বৈরিতা নয়/ ক্যাডার থেকেই বের হয়ে যাই, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস চাই.. ‘ স্লোগান ছড়িয়ে দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। সদস্যসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে এই কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
কমিশনের সুপারিশের মধ্যে থাকছে—জনপ্রশাসনে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি; উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দ করা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখা। কমিশনের সুপারিশের বিষয়গুলো সামনে আসার পরই এ ব্যাপারে প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সব পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন চায়। অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাঁদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রাখার সুপারিশের বিপক্ষে। মানে তারা ক্যাডারেই থাকতে চান।
এর মধ্যে ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি সভা করে। সভায় পরিষদের সঙ্গে পরিষদভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের পৃথক সংগঠনের নেতাদের মতবিনিময় হয়। সভা থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়–সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালনা ও কোটামুক্ত উপসচিব পুলের দাবিতে কলমবিরতিসহ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামীকাল সোমবার প্রতিটি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে বিবৃতি দেবে। পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টা সব অফিসে কলমবিরতি। ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন। আর যেসব বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি, দ্রুত সেখানে সমাবেশ আয়োজন ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। এ ছাড়া আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ আয়োজন করা হবে। সেখানেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।