বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজত থেকে মুক্তি পান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। মুক্তি পেয়েই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। পোস্ট দিয়েছেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ এবং মেহের আফরোজ নুসরাত তাবাসসুমের ফুফাতো বোন।
পোস্টের মাধ্যমে সমন্বয়কেরা আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
পোস্টে সারজিস লিখেছেন, ‘কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি। আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারা দেশে আমার স্কুল কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন। মাশরুর তার উদাহরণ’।
‘যারা একটিবারের জন্যও এ আন্দোলনে এসেছেন তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না, গ্রেপ্তারের ভয়ে থাকে। এমন অনেকে আছে যাদের পরিবার এখনো তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিত ছিল না! কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতুভবনে হামলার জন্য গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলেন। সঙ্গে আছেন আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী।’
তিনি আরও লেখেন, ‘রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজনভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। কী ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে? ৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায় কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত সেগুলো কীভাবে নিবৃত করবেন।’
‘পুলিশ ভাইদের উদ্দেশ্যে একটা বলি। এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের ওপর নয়, পুলিশের ওপর নয়। এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার ওপর। যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার ওপর। ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সাথে, বুকে টেনে নেব।’
সারজিস লেখেন, ‘এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনো কিছু মোকাবেলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে ; ততদিন এ লড়াই চলবে।’
পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন- ‘এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। এই গণগ্রেপ্তার গণঘৃণার নামান্তর। আমাদের মুক্তি তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটিও মুক্তি পাবেন। এই গণগ্রেপ্তার কেবল নিরপরাধ মানুষের অধিকার হরণ নয়, বরং আমাদের সমগ্র সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন। এটি মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতি এক ভয়ানক আঘাত।
আমাদের এই আন্দোলন শুধুমাত্র ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়, বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। ’
আসিফ মাহমুদ লিখেছেন- ‘বেআইনিভাবে আটক রাখা থেকে মুক্তির দাবিতে গত মঙ্গলবার রাত থেকে ৩২ ঘণ্টা আমরণ অনশনে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলাম ও আবু বাকের মজুমদার। এ সময় তারা কোনো প্রকার খাবার, পানি, ও চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সমন্বয়কদের অনশনের মুখে আজ দুপুর ১টার দিকে ৬ সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ’
নুসরাত তাবাসসুমের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তার ফুফাতো বোন মেহের আফরোজ। নুসরাতের ফেসবুক থেকে তিনি লিখেছেন- ‘নুসরাত তাবাসসুমকে ডিবি অফিস থেকে ফেরত পেয়েছি আমরা। ৩২ ঘণ্টা অনশনের ফলে শারীরিক মানসিকভাবে নুসরাত দুর্বল। সে বর্তমানে কারও সাথে যোগাযোগ করার অবস্থায় নেই। সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে নুসরাত তাবাসসুম আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবে। সকল প্রতিবাদী কণ্ঠকে আপনাদের দোয়ায় রাখবেন।
মেহের আফরোজ নুসরাত তাবাসসুমের ফুফাতো বোন’ নাহিদ ও আবু বাকের এখনও নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাননি।