লুনার ভিআর দিয়ে জয় করেও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) ভ্রমণের স্বপ্নভঙ্গ ঘটলো ‘স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’-১৮ চ্যাম্পিয়ন টিম ‘অলিক’-এর। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী, আগামী ১৯ জুলাই নাসা’র উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়ার কথা ছিলো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাস্ট) এই দলটির চার সদস্যের। এরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এস এম রাফি আদনান, ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কাজী মাইনুল ইসলাম ও আবু সাবিক মাহদী ও একই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান।
তাদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যাওয়ার কথা ছিল তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ছয় কর্মকর্তা, বেসিসের পাঁচজনসহ মোট ১৬ জনের।
ভিসা না মেলায় বেসিস সেক্রেটারি হাশিম আহমেদ, নাসা অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রকল্প পরিচালক ওয়াসেক সাজ্জাদ এবং লজিস্টিক ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুল হকসহ বিজয়ীদের কেউই যেতে পারছেন না।
তবে শুক্রবার রাতে নাসার অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন- আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি সালমা সিদ্দিকা মাহাতাব, মো. আবুল খায়ের, মো. দিদারুল আলম, হাইটেক পার্কের ডেপুটি সেক্রেটারি মো. আবদুল হাই, আইডিয়া প্রোজেক্টের কাজী হোসনা আরা ও আইসিটি ডিভিশনের প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা একরামুল হক এবং বেসিসের পরিচালক দিদারুল আলম সানি, বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু (আগে থেকেই তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভিসা নেয়া ছিলো)।
জানাগেছে, নাসার এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক জনপ্রতি দুই লাখ ৭৭ হাজার টাকা করে বাজেট দেয়া হয়েছে। অগ্রিম এয়ার টিকিট, হোটেল ভাড়া করা হয়েছে সবার জনই। কিন্তু ভিসা জটিলতায় তীরে এসে ডুবলো তরী। লুনার জয় করেও নাসা’র আয়োজন তাদের কাছে অধরাই থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে টিম অলিক দলনেতা আবু সাবিক মাহদী ডিজিবাংলা-কে বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা ভিসি স্যার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ভিসার চেষ্টা করেছি। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা আমাদের ২৩ তারিখ সাক্ষাতের সময় দিয়েছে। কিন্তু নাসার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে হলে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের নাসাতে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে ২১, ২২ ও ২৩ জুলাই নাসার বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ২১ জুলাই রকেট ফ্যালকন-৯-এর সিআরএস-১৮ মিশনের মহাকাশে উৎক্ষেপণ এবং ২২ ও ২৩ জুলাই অন্যান্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ আমরা আর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছি না। অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল।
তিনি আরো বলেন, “এই রকম একটি প্রতিযোগিতায় আমাদের দেশ থেকে একটি দল প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হয়ে যদি সেখানে অংশগ্রহণ করতে না পারা ভবিষ্যতে আমাদের দেশের তরুণ প্রতিযোগীদের বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে, তাদের স্বপ্ন দেখার পরিধি অনেক ছোট হয়ে যাবে। এই সকল বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের উচিৎ এই তরুণ মেধাবীদের পাশে এসে দাড়ানো এবং তাদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা।”
মাহদি জানান, গত ২৯ মে ও ১২ জুন দুটি আলাদা ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের আমন্ত্রণ জানায় নাসা এবং ২১ জুন নাসা থেকে প্রত্যেক সদস্যের নাম উল্লেখ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিল। আমন্ত্রণপত্র পেয়ে তারা ১ জুলাই ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করেন। ভিসার জন্য তারা সাক্ষাৎকার দেন ১১ জুলাই। পরে তাদের ভিসা আইএন-এর ২১৪ (বি) ধারায় (দেশে ফিরে আসবে না এমন সন্দেহ থাকায়) প্রত্যাখ্যান করে দূতাবাস। এরপর দ্বিতীয় দফায় ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করেও হেরে যায় তারা।