সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হওয়ায় প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন করে ঘরে বসে রেমিটেন্স আয়করা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা। আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে না পারায় দীর্ঘ মেয়াদে এই ক্ষতি আরো বেশি এবং দেশের ব্র্যান্ডিং ইমেজ নষ্ট করেছে বলেন মনে করেন ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস)-এর চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান। আগামী তিন মাসে এই ভাবমর্যাদা পুণরুদ্ধার করা না গেলে নতুন কাজ পাওয়া এবং ফ্রিল্যান্সারদের র্যাংকিং ধরে রাখা প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে চিন্তিত তিনি।
ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা গত ৭ দিনের ক্ষতির কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা ডা. তানজিবা রহমান বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষতির সম্পর্কে ডা. তানজিবা রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ৫ দিনে আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বছরে এটার উপরে যে দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পড়বে, সেটির ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা।
রবিবার বিকেলে মোবাইল ইন্টারনেট খুলে দেয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করি, আমাদের কাজের মূল মাধ্যমটাই হলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। এটির উপর ভিত্তি করেই আমাদের সমস্ত কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে। ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাতে দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে কোনরকম ঘোষণা ছাড়াই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কেনো দেশের ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছে বা কতদিন বন্ধ থাকবে সে বিষয়টি আমাদের ক্লায়েন্টদেরকে জানানোর সুযোগটাও পাইনি। কিন্তু আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের প্রত্যেকটি প্রজেক্ট বা কাজের ডেটলাইন দেওয়া থাকে। বিদেশি কোম্পানির সাথে কাজ করতে ওই সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টের নিয়মিত আপডেট দিতে হয়। সেসাথে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রজেক্ট সম্পন্ন করে ডেলিভারি দিতে হয়। কমিটমেন্ট অনুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে জমা দিতে না পারলে আমাদের পেমেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের উপরে ক্লায়েন্টদের আস্থা কমে গেছে। এখন এটা পুণরুদ্ধার করাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।
“আগে যে ক্লায়েন্ট প্রতেকটি প্রজেক্টের আপডেট দেওয়ার সময় কত উৎফুল্ল ও হাসিখুশিভাবে কথা বলতেন। সে ক্লায়েন্ট যখন ইন্টারনেট চালু হলো তখন প্রথমেই বললেন, দেশের সমস্যা হতেই পারে, ইন্টারনেট বন্ধ করার আগে কি একবারও একটা মেইল করে জানাতে পারলেন না? তখন অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। সহজে বুঝতে চান না। দীর্ঘ দিনের পুরানো ক্লায়েন্ট দেখে প্রজেক্ট বাতিল করেননি। তবে এখন কাজের সময় কথা-বার্তায় আর আগের মতো সাবলীল না। অনেকটা আস্থা কমে গেছে”- যোগ করেন তানজিবা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার অনলাইনে কাজ করছেন। আমাদের মতো যারা পুরানো, তাদের হয়তো ক্লায়েন্টগুলো চলে যায়নি। মোটামুটিভাবে আমরা পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবো। কেননা অনলাইনে কাজগুলো সাধারণত, ফ্রিল্যান্সারদের কমিটমেন্ট, সময়নিষ্ঠতা, যোগাযোগের দক্ষতা ও সম্পর্কের কারণে ক্লায়েন্টরা কাজ করিয়ে নেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আমাদের গিগে কাজের রিভিউ দেওয়া হয়। সে অনুসারে কাজ পেয়ে থাকি। কিন্তু নতুনদের বেলায় চিত্রটা ভিন্ন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কারণ কোনভাবে, কোন কারণে ফ্রিল্যান্সাররা যদি প্রজেক্টের আপডেট জানাতে না পারেন, যোগাযোগে সমস্যা হয়, তাহলে বিদেশি কোম্পানিরা প্রজেক্ট বন্ধ করে দেয়।
ভবিষ্যতে সারা দেশের ফ্রিল্যান্সাররা যাতে এমন পরিস্থিতিতে আর না পড়েন সেজন্য বিএফডিএসের পক্ষ থেকে যারা সরকারের স্বীকৃত ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আইডি কার্ড পেয়েছেন তাদের জন্য যেন সাংগঠনিকভাবে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) থেকে লাদাভাবে একটা ইন্টারনেট হাব থেকে ইন্টারনেট লাইন দেওয়া হয় সেই উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ক্যরিয়ারকে নিয়ে যারা স্ক্যামিং করে, তাদের রুখে দেয়ার পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সঞ্চালন সম্ভব হবে। এজন্য সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, দেশে যেকোনো সময় যেকোনো দুর্যোগ হতেই পারে। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে কোনরকম ঘোষণা না দিয়ে যেনো আগামী দিনে কখনও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ না করা হয়। আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে। আগামী দিনে এ ধরনের ক্ষতি হলে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কিভাবে সাপোর্ট দিবে, সাপোর্টের ধরনগুলো কেমন হতে পারে, এ বিষয় নিয়ে আমারে একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট দূর করতে চাই। ইন্টারনেট নিয়ে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একা একা এগুনো যাবে না। এজন্য আমি ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর সবগুলো সংগঠনের সঙ্গেই আলাপ করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ খুলে দেয়ার সময় ফ্রিল্যান্সারদের অগ্রাধিকার দেয়ায় সরকারের প্রতি কৃতক্ষতা জানাচ্ছি।