প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে মাসব্যাপী বিপিও সম্মেলন অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় চা’য়ে দেশ সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনের “বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৩” সম্মেলন। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেশন, সিভি সংগ্রহ এবং চাকুরি মেলা চলেছে মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত। চাকরি দিতে মেলায় অংশ নেয় ‘সার্ভিস সলিউশানস প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘মাই আউটসোর্সিং লিমিটেড’, ‘এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’, ‘জয় কম্পিউটার লিমিটেড’, ‘এইচএমসি টেকনোলজি লিমিটেড’, ‘জুবিসফট্ লিমিটেড’ এবং ‘ফেইথফোন কল সেন্টার’।
সম্মেলনের সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয় এই খাতের সারকারী নীতি বিষয়ক আলোচনা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ফ্রিল্যান্সিং, বিপিও কিংবা আউট সোর্সিং-কে কীভাবে আরো প্রবৃদ্ধিতে নেয়া যায় সেই কর্মকৌশল গ্রহণ। সম্মেলন থেকে এই খাতকে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মী ও মুক্তপেশাজীবীদের সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে লেগে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা
সিলেটের রিকাবী বাজারে অবস্থিত কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে বিকেলে বাক্কো সহ-সভাপতি তানভীর ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন পূরণের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছি। প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে দেশে বসেই ডলার আয় করা সম্ভব। তাই অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে জায়গায় করে নিবে, যদি আমরা সততা এবং নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করি”।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাক্কো অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল হক । এরপর বাক্কো পরিচালক আবু দাউদ খান বিপিও শিল্প ও এ খাতে ক্যারিয়ার উন্নয়ন রূপরেখা নিয়ে একটি উপস্থাপনা পেশ করেন। উপস্থাপনার ওপর বক্তব্য রাখেন লিডিং ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিক; বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) ডা. তানজিবা রহমান এবং বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘বাক্কো লোকাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট’ উপকমিটির চেয়ারম্যান মৃধা মোঃ মাহফুজ-উল-হক চয়ন এবং ‘বাক্কো মেম্বার সার্ভিসেস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট’ উপকমিটির কো-চেয়ারম্যান মোঃ ফাহাদ হোসেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)’-এর উদ্যোগে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ‘বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল’-এর সার্বিক সহযোগিতায় মে-জুলাই মাসব্যাপী দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে বাংলাদেশের বিপিও শিল্পের সর্ববৃহৎ, শীর্ষ সম্মেলন । গত ২৩-২৪ মে রাজশাহী বিভাগ থেকে যাত্রা শুরু করে “বিভাগীয় বিপিও সামিট ২০২৩”। আর তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের বিভাগীয় অনুষ্ঠান গত ৫-৬ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেটে।
গত ৫ জুন সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে “ক্যারিয়ার ক্যাম্পেইন”-এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে “বিভাগীয় বিপিও সামিট ২০২৩ (সিলেট)” । পরবর্তী ধাপে ৬ জুন তারিখে আয়োজিত হয় পলিসি ডিসকাশন সেশন এবং মূল অনুষ্ঠান। ৬ জুন সকাল ১০টায় সিলেট বিভাগের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফস্টারিং বিপিও ইন্ডাস্ট্রি টু অ্যাচিভ স্মার্ট বাংলাদেশ (Fostering BPO Industry to Achieve SMART Bangladesh)’ শীর্ষক পলিসি ডায়লগ সেশন। এ আয়োজনের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাক্কো সহ-সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম। উপস্থিত সকল সরকারি প্রতিনিধিগণ ও অতিথিদের এ সেশনে অংশগ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন- “বিপিও শিল্পে কাজ করতে গেলে তথ্যপ্রযুক্তির কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি আরও বহুমুখী তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। বাক্কো তাই সবার জন্যই তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত বিষয় বাদেও এর সঙ্গে সম্পর্কিত নানামুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এসইআইপি (SEIP) প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্কো ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষণ দিয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থীকে; যারা বিপিও শিল্পক্ষেত্রের বাইরেও নানান দিকে ছড়িয়ে পড়েছে।”।
অনুষ্ঠানে দেশের বিপিও শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন বাক্কো পরিচালক আবু দাউদ খান। এরপর শুরু হয় মূল আলোচনা, যেখানে বিভাগীয় পর্যায়ের বিপিও শিল্পের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নানান দিক, নীতিসংক্রান্ত সম্ভাব্য পরিমার্জনের প্রস্তাবনা ও আবশ্যিকতা নিয়ে বিশদ আলোচনায় অংশ নেন স্থানীয় অংশীজন, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিপিও শিল্পের কর্তাব্যক্তিরা।
এ পলিসি ডিসকাশন সেশনের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মজিবর রহমান।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন- “২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মাধ্যমে প্রথমবার যখন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাটির সঙ্গে পরিচিত হই, তখন অনেকেই বুঝতে পারি নি বিষয়টি আসলে কী। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সুযোগ্য পুত্রের হাত ধরে আমরা সত্যি সত্যি ডিজিটাল বাংলাদেশে উপনীত হয়েছি। আগে এরকম একটা সম্মেলন বিভাগীয় পর্যায়ে করতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন হত। কিন্তু আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতেই খুব অল্প সময়েই আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে এত চমৎকার আয়োজন করতে পেরেছি। এই বিপিও সামিটের মাধ্যমে সিলেটের তরুণ প্রজন্ম খুব উপকৃত হবে বলেই আমার বিশ্বাস। ২০৪১ সালের “স্মার্ট বাংলাদেশ”-এ যাওয়ার জন্য আজকের মত এধরণের সম্মেলন খুবই প্রয়োজনীয়। আমি মনে করি বিপিও সামিট একটি খুবই বড় উদ্যোগ এবং এর সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি। ”